চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) গত ১৮ জুলাই দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের তান্ডবের ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এ কারণে বিটিভি’র সদর দপ্তর প্রায় ১৯ ঘন্টা তার সম্প্রচার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল।
বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক মাহাফুজা আকতার জানিয়েছেন, যদিও পরের দিন থেকে বিটিভি তার সম্প্রচার পুনরায় শুরু করেছে, তবে এটি এখনও পুর্ণউদ্যোমে চালু হতে পারেনি। কারণ বসার স্থান ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দায়িত্ব পালনে এখনও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী এখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিভিশন কেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, কিন্তু এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখনও সেই তান্ডবলীলার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠতে পারেননি।
বিটিভি ভবনে যে নৈরাজ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তা বর্ণনাতীত। ১৯৭৫ সালের পর, রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান এমন সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেনি। বিটিভির প্রতিটি স্থান অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও বর্বরতার সাক্ষ্য বহন করছে।
কোটা আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই সংগঠন বিটিভির তিনটি প্রধান ফটক ভাঙচুর করে তাদের নৃশংসতার কর্মযজ্ঞ শুরু করে।
বিটিভির মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, ১৮ জুলাই বিকেলে বিটিভি ভবনের প্রধান ফটক ভেঙ্গে বিপুল সংখ্যক দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে।
তিনি বলেন, উত্তেজিত হামলাকারীরা প্রথমে সেখানে পার্ক করা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয় এবং পরে বিটিভি ভবনের ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন ফ্লোরের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা বিটিভির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনুরোধে কর্ণপাত করেনি।
দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে মুহূর্তের মধ্যে পুড়ে যায় রাষ্ট্রের জরুরী এ প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এমনকি আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও বিটিভি ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
এরপর জঙ্গি কায়দায় বিটিভি সদর দপ্তর ভবনের ছয় তলা, মুজিব কর্নার ও নিচ তলায় অবস্থিত বিটিভি জাদুঘরে ভাঙচুর চালায় সন্ত্রাসীরা। তারা জাদুঘরে সংরক্ষিত বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ভাংচুর ও লুট করে।
বিটিভির ক্যান্টিন ও কম্পিউটার ল্যাব ভাংচুর ও লুটপাট, ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও আরো নয়টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার অত্যাধুনিক আউটডোর ব্রডকাস্টিং যানবাহনও ভাঙচুর করা হয়।
গত ২৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর রামপুরায় সহিংসতা কবলিত রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন পরিদর্শন করেন।
তিনি কোটা-সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বিটিভি’র সকল বিভাগ পরিদর্শন করেন।
বিটিভি ভবনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী মর্মাহত হন ও অসন্তেুাষ প্রকাশ করেন।
বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিটিভি কর্মকর্তারা যখন তাদের অশ্রু সংবরণ করার চেষ্টা করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রীকেও অশ্রুসিক্ত দেখা গেছে।
বিটিভির দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিটিভির বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, নকশা বিভাগ, অফিস ভবন ও বিভিন্ন কক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভাঙচুরের ঘটনায়, ১৯৬৪ সাল থেকে সংরক্ষিত অমূল্য প্রাচীন জিনিস দিয়ে সজ্জিত টেলিভিশন জাদুঘর, মুজিব কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, অভ্যর্থনা ও ওয়েটিং রুমের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) ও অন্যান্য জিনিসপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এছাড়াও প্রায় ৪০টি কম্পিউটার, ১০০টি টেলিভিশন সেট এবং কম্পিউটার ল্যাবের আসবাবপত্র, প্রশিক্ষণ কক্ষ ও প্রিভিউ রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিফট, নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্ট, সিসি ক্যামেরা ও মনিটরিং সেটও ভাংচুর করা হয়।
যানবাহন ভবন ও শেড, ক্যান্টিন ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ কক্ষ; একটি সম্প্রচার ওবি ভ্যানসহ ১৭টি গাড়ি ও ২১টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং নয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এছাড়া অডিটোরিয়াম, লাউঞ্জ, ডিজাইন, মেক-আপ, ওয়ার্কশপ, গ্রাফিক্স রুম, স্টোর/ওয়ারড্রোব রুম ও ২০টি গ্রাফিকস কম্পিউটারও ভাংচুর করা হয়।
নকশার শেড, স্টুডিওর ছাদ, দেয়াল, ভবন ও অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রায় ৭০টি এয়ার-কন্ডিশনার (এসি), অফিসিয়াল আসবাবপত্র, পাঁচটি ফটোকপি মেশিন এবং প্রায় ৫০টি অফিসিয়াল কম্পিউটারও ভাংচুর করা হয়েছে।
১০টি কম্পিউটার ওয়ার্কস্টেশন সহ ১০০টি মনিটরিং সেট, বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, সহায়ক যন্ত্রপাতি, রেকর্ডিং ক্যামেরা, আলোক উৎস সামগ্রী ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম, গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক ফাইল, নথি, শিল্পীর সম্মানী-সম্পর্কিত খাতা, ব্যাংক বই, ভাউচার এবং অডিট বিল ইত্যাদিও বিনষ্ট করা হয়েছে।