রাজার কন্যার অন্ধত্ব ঘোচাতে দিঘি খনন, দেখে আসবেন যেভাবে

বরিশাল অফিস :: প্রতিদিন হাজারো মানুষের সুখ-দুঃখ কিংবা অবসরের সঙ্গী হয় এই দিঘি। কেউ পাড়ে বসে জমিয়ে দিয়েছে আড্ডা, কেউ বড়শির শিকারে একের পর এক তুলে আনছেন বড় বড় মাছ, কেউ বা শরীর চর্চায় ব্যস্ত। দিঘির শীতল পানিতে নিজেকে চুবিয়ে রাখতেও এই দিঘি অনন্য। বলা হচ্ছে ফেনী শহরের ‘মধ্যমণি’ রাজাঝির দিঘির কথা। যেটির আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং লোকমুখে প্রচলিত নানা মিথ।

রাজাঝির দিঘি ফেনীর কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্য। জেলার জিরো পয়েন্টে ও ফেনী ট্রাংক রোডের সংযোগস্থলে এটি অবস্থিত। এ দিঘিটি ফেনীর শতবর্ষের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের একটি। এত বছরেও দিঘির স্বচ্ছ জল রূপ-সৌন্দর্য্য আজও কিছুটা ধরে রেখেছে।

জনশ্রুতি আছে, ত্রিপুরা মহারাজের একজন রাজার কন্যার অন্ধত্ব দূর করার মানসে এ দিঘি খনন করেন। স্থানীয় ভাষায় কন্যাকে ঝি বলা হয় তাই দিঘিটির নামকরণ করা হয় ‘রাজাঝির দিঘি’। ফেনী অঞ্চলের মানুষ কন্যাকে আঞ্চলিক ভাষায় ঝি বলে থাকে। ফলে দিঘিটি খননের পর থেকেই রাজাঝির দিঘি বা রাজনন্দিনীর দিঘি নামে পরিচিত হয়ে উঠে।

ফেনীর প্রথম মহকুমা প্রকাশক কবি নবীন চন্দ্র সেন তার ফেনীর কথা বইতে (১৮৭৬) লিখেছেন, শোনা যায়, ফেনীর এই দিঘির জল এত চমৎকার ছিল যে, জনৈক ব্যক্তির পরিবার ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে কঙ্কালসার হয়েছিলেন, এবং এই দিঘির জল পান করে আরোগ্য লাভ করেছিল। ফেনীর বিভিন্ন গ্রামের ও ট্রাংক রোডের শত শত মানুষ এই দিঘির জল পান করিত। উহা ফেনীর জীবন ও শোভা, এমন বলিলেও হয়।

১৮৭৫ সালে ফেনী মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হলে তার সদর দফতর গড়ে তোলা হয় এই রাজাঝির দিঘির পাড়ে। তবে ১৯৮৪ সালে ফেনী জেলা হওয়ার পর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়। তবে কিছু ভবন এখনও পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে রয়েছে। দিঘির পাড়ে বর্তমানে ফেনী সদর থানা, ফেনী কোর্ট মসজিদ, অফিসার্স ক্লাব, ফেনী রিপোর্টাস ক্লাব, জেলা পরিষদ পরিচালিত শিশু পার্কসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রয়েছে।

জনসাধারণের বিনোদন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাফেরার সুবিধার জন্য রাজাঝির দিঘির দুই পাশে কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘির পাড়ের নিচে চলাফেরার সুবিধার জন্য রাস্তা, দিঘিতে নামার জন্য উন্নতমানের সিঁড়ি, মাঝে মাঝে খালি জায়গায় বৃক্ষ রোপণ, বসার জন্য বেঞ্চ স্থাপনসহ পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

দিঘির জল যাতে সবাই স্পর্শ করতে পারে, সেইজন্য তিন পাশে পাঁচটি সিঁড়ি হয়েছে। দিঘিতে ময়লা আবর্জনা যাতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে গড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য চারপাশ উঁচু করা হয়েছে। বর্তমানে দিঘির পানি পানের ও ব্যবহারের উপযোগী।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো পরিবহণের বাসে ফেনীর মহিপাল যাওয়া যায়। তবে স্টার লাইন পরিবহণ সবচেয়ে ভালো। মহিপাল বাস ষ্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে রাজাঝির দিঘি পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া চট্টগ্রামগামী ট্রেনে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে এসে একইভাবে রাজাঝির দিঘি দেখতে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

ফেনী শহরের অবস্থিত আবাসিক হোটেলের মধ্যে বেস্ট ইন হোটেল, হোটেল মিড নাইট এবং হোটেল গাজী ইন্টারন্যাশনাল অন্যতম। এছাড়া অনুমতি নিয়ে ফেনী সার্কিট হাউস, ফেনী জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, এলজিইডি রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।




শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাদ বাগান করে সফল শামীম

বরিশাল অফিস :: বর্তমানে সারাদেশে ফসিল জমি কমছে বাড়ছে বসতি। তাই অল্প জায়গায় অধিক ফল-ফসল উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে সরকারের নানা উদ্যেগ রয়েছে। তাই দেশের বিভিন্ন শহরে বড় বড় বিল্ডিংয়ের বাড়ির ছাদে বাগান করতে ঝুঁকেছন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

বেশিরভাগ বাড়ির ছাদের দিকে তাকালেই বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির বাগান দেখা যায়। যেসব বাগান দেখা যায়, তার বেশিরভাগ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেয়া হলে বাড়ির ছাদে যেকোনো গাছ, এমনকি শাকসবজিও ফলানো সম্ভব। এসব বাগান করে সফলতাও পাচ্ছেন অনেকে। শখ থেকে হয়ে উঠছে বাণিজ্যিক চিন্তাধারাও।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়নের সুবিদখালী বাজার এলাকায় এম. শামীম আহমেদ নাসিরের ভবনের ছাদে নিজ উদ্যোগে গড়ে তোলা অরিজিনাল থাই ড্রাগন লাল, সাদা, হলুদ তিন প্রজাতির গাছ। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, বারোমাসি পেয়ারা ইত্যাদি এবং বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি শাক সবজি রয়েছে।

তবে নানান জাতের ফল, ফুল ও সবজির বাগান দেখতে ওই ছাদে ভিড় করছেন অনেকে। তিনি পেশায় একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি উপজেলার ৩৫ নম্বর এন এস আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক এবং বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি মির্জাগঞ্জ উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তার ছাদ বাগান দেখে এলাকার অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

শামীম আহমেদ পেশায় একজন শিক্ষক হলেও বাগান করার প্রতি তার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলায় বাড়ির আঙ্গিনা কিংবা আশপাশ যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই তিনি বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রোপন করতেন। ছোটবেলার শখকে তিনি একটি মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা আশপাশ তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে দু’একটা গাছা লাগিয়ে বাগান করা শুরু করেন। নিজ বসতবাড়ির তিনতলা ভবনের ছাদকে এখন তিনি জীবন্ত বাগানে পরিণত করেছেন। ছাদের কোথাও তিনি থাই ড্রাগন, কমলা, আম্রপালি, হাঁড়িভাঁঙ্গা, মাল্টা, বেদানা, লিচু, লেবু, বারোমাসি আমড়া, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ লাগিয়েছেন। কোথাও আবার পেঁপে, বেগুন, শসা, লাল শাক, পালংশাক এবং মরিচা গাছ-সহ অনেক ধরনের সবজি গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়াও আবার কোথাও হাসনাহেনা, গোলাপ, জবা, গাঁধা, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। সবজি, ফল আর ফুলে ভরে গেছে ছাদের সমস্ত অংশ। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো ছাদ, নাকি সবুজ ফসলের মাঠ। সব ধরনের সবজি ও ফল কীটনাশক ব্যবহার না করেই এবং জৈবসার ব্যবহার করে উৎপাদন করছেন আদর্শ শিক্ষক শামীম আহমেদ।

উৎপাদিত সবজি ও ফল নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত ফল ও সবজি আত্মীয় স্বজনের মাঝে বন্টন করেন বলেও তিনি জানান। শামীম আহমেদ শিক্ষকতা, ব্যবসা ও ছেলে-মেয়ের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় তিনি বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যবহার করেন।

শিক্ষক এম. শামীম আহমেদ নাসির জানান, ‘২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ে ছুটি থাকায় ড্রাগন ফলের গাছ লাগিয়ে ছাদ বাগান শুরু করি। ছোটবেলা থেকেই বাগান করা আমার শখ। আমার বাড়ির সাথে তেমন ফসলি জায়গা না থাকায় ছাদে বাগান করা শুরু করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং স্কুল থেকে ফিরে বিকালে এক ঘণ্টাব্যাপী করে বাগানের পরিচর্যার কাজ করি। বর্তমানে আমার ছাদ বাগানে ১০০টি অরিজিনাল থাই ড্রাগন (লাল, সাদা ও হলুদ) এই তিন ধরনের গাছ রয়েছে এবং এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির আমগাছ, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, বারোমাসি পেয়ারাসহ দুই শতাধিক গাছ রয়েছে ও বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি শাক সবজি রয়েছে।’

শামীম আরো বলেন, ‘শহরে ছাদ বাগানের কদর থাকলেও মফস্বল এলাকায় ছাদ বাগান তৈরী করার কেউ চিন্তাও করে না। কারণ এতে অনেক পরিশ্রম ও খরচও বেশি এবং তবে এখানে বাগান থাকেও নিরাপদ। কারণ এখানে গরু, ছাগল কিংবা মানুষের দ্বারা বাগানের ক্ষতি হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ অবসর সময়টা বাগানের মধ্যেই কাটিয়ে দিই।’

তিনি আরো জানান, ‘সৌন্দর্য পিপাসু ব্যাক্তি অনেকে বাগান দেখতে ছাদে আসেন এবং তাদের আমি ছাদ বাগান করার পরামর্শ দেই। অনেকে আমার বাগান দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে আমার মতো মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীতে আরো দু’জন ছাদ বাগান করে সফলতা পেয়েছেন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: আবদু্ল্লা আল-মামুন জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি শামীম আহমেদের ন্যায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ছাদে বাগান করার দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।’

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মির্জাগঞ্জে ছাদ বাগানের সংখ্যা বেড়েছে। কর্ম জীবনের পাশাপাশি ছাদ কৃষি করছেন অনেকে। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটাতে সহযোগিতা করেন ছাদ কৃষি। এ সকল কাজে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে করে নিজে ও তার পরিবারসহ সমাজ উপকৃত হচ্ছে।




চানাচুর বিক্রেতা ‘মাইকেল জ্যাকসন’

বরিশাল অফিস :: কখনো গান গেয়ে কিংবা কখনো গানের তালে তালে নেচে মানুষকে বিনোদন দিচ্ছেন। সেজেছেন বিখ্যাত পপ স্মার্ট মাইকেল জ্যাকসনের অবয়াঅবে। চোখে সানগ্লাস, মাথায় লাল কাপড় পেচানো গোলাকার টুপি, পায়ে বুট জুতা। পরনে বেশ পরিপাটি মার্জিত পোষাক। ফুরফুরে মেজাজে ভোলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করেন। স্মার্ট চানাচুর বিক্রেতা হিসেবে তার যতেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। নিজস্ব পরিকল্পনায় মোটর বিশিষ্ট তিন চাকাওয়ালা একটি গাড়ি। প্রয়োজনে পায়ে চালানোর জন্য প্যাডেলও আছে। এসেসের তৈরী প্রয়োজনীয় বক্স, ঘটি-বাটি, চানাচুর গরম রাখার কয়লাবিশিষ্ট একটি বক্স, বিভিন্ন মশলার পট। গরম চানাচুরের সাথে পেয়াজ, শসা, কাঁচা মরিচ, গাজর, সরিষার তৈলসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যবহারে চানাচুর স্বাদকে বাড়িয়ে তোলে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার উত্তর বাসস্যান্ডে এমন এক চানাচুর বিক্রেতাকে বাহারি গানে ডাকতে দেখা যায় ছোট ছোট সোনামনিদেরকে। নাম তার জুয়েল। বয়স ২৫ বছর। বাবা জসিম মিয়া ও মা রহিমা বেগম। তিনি ভোলা ও বোরহানউদ্দিনের মধ্যেখানে খায়ের হাট বাজারের পাশেই গাড়িঘাটায় বসবাস করেন। কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন পেশার মানুষদেরও ভিড় লক্ষ্যে করা যায় তার চারপাশে। ক্রয় করেন স্বাদে গুণে অনন্য ঘটি গরম চানাচুর।

স্থানীয় মাদরাসা শিক্ষক মাও: আবদুল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন সবজি, মশলা ব্যবহার করার কারণে এই চানাচুর স্বাদ হয়।’হোটেল ব্যবসায়ী আলী আকবর, কার ড্রাইভার মো: জিয়াউল হক, বীকন ফার্মার প্রতিনিধি মো: ইলিয়াছসহ সবাই একই মতামত দেন।

একান্ত আলাপচারিতায় জুয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমি আগে হোটেলে কাজ করতাম। একদিন ইউটিউবে মাইকেল জ্যাকসনের একটি গান দেখি। সেই থেকে আমি তার ভক্ত। আমার সারাদিনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার চানাচুর বিক্রি হয়। দুই হাজার টাকা লাভ হয়। আমি অনেক পরিশ্রম করি। আমি পাঁচ বছর ধরে চানাচুর বিক্রি করছি। আমাদের পরিবারের ৬ সদস্যর সংসার চলে এর ওপর। আমাদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি ছিল না। কিছুদিন আগে আমরা দুই লাখা টাকায় তিন শতক জমি ক্রয় করি এই ব্যবসা থেকে।’

বিয়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার ব্যবসা নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করে। তখন আমি লজ্জা পাই। কর্ম করে খাচ্ছি, চুরি-ডাকাতি তো করছি না। ভবিষ্যতে একটি দোকান নেয়ার ইচ্ছা আছে।’




গরমে সতেজ থাকতে যে ৪ খাবার খাবেন




জায়েদ খানের সঙ্গে অভিনয় করতে চান টয়া




চুলে মধু ও কলা ব্যবহার করলে কী হয়?




বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তুত পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়েছে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। সেপ্টেম্বরে এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর ডিসেম্বরে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে বাকি ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সে লক্ষ্যে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ।

এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হওয়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের জন্য এটি মাইলফলক বলে মনে করছেন এই প্রকল্পের কর্মকর্তারা।

২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) যৌথ বিনিয়োগে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু করে।

জেলার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে ৯১৫ একর জমির উপর ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। করোনাসহ নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে টারবাইন, চুল্লি, কোল স্টোর, স্টিল স্ট্রাকচার, বয়লার, ওয়াটার ফিড ও জেনারেটর বসানোর কাজ। বর্তমানে দ্রুতগতিতে চলছে কনস্ট্রাকশন ও রঙের কাজ। ৪ হাজার বাঙালি ও দেড় হাজার চাইনিজ শ্রমিক এ নির্মাণ কাজ করছেন।

আরো পড়ুন : মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক

ইতোমধ্যে বয়লারে ফায়ারিংও করা হয়েছে। মোট কথা বর্তমানে বিদুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত এ পাওয়ার প্লান্ট। এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে নিজস্ব অর্থায়নে ২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন, ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন ও পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলায় একটি সুইচিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। এ সুইচিং স্টেশনের কাজও ৯২ ভাগ শেষ।

বর্তমানে শেষ পর্যায়ের টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ চলমান। জুলাই মাসে ব্যাক ফিড পাওয়ার পেলে সেপ্টেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে চায় প্রকল্পটি।

পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (তড়িৎ) আসিফ আহমেদ জানান, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন, ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন ও পার্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলায় একটি সুইচিং স্টেশন তৈরি করেছি। এ সুইচিং স্টেশনের কাজও ৯২ ভাগ শেষ হয়েছে।

অপর নির্বাহী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) শওকত ওসমান বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের প্রথম ইউনিটের সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা বয়লারে ফায়ারিংও করেছি। মোটকথা আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি, জুলাই মাসে ব্যাক ফিড পাওয়ার পাব। এ ব্যাক ফিড পাওয়ার পেলে সেপ্টেম্বরে ৬৬০ মেগাওয়াট ও ডিসেম্বরে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করতে পারব বলে আশা করছি।




মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: একের পর এক দুর্ঘটনা সড়ক পথে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী রুটের যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। তাই নিরাপত্তার খাতিরে অনেক যাত্রী আবার নৌ-পথে যাতায়াত শুরু করেছেন।

যার প্রমাণ মিলেছে বরিশাল ও পটুয়াখালীর নদী বন্দরে পবিত্র ঈদুল আযহার ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষগুলোর ভিড় দেখে।

লঞ্চের যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, গত কয়েকদিনে শুধু সড়কে দুর্ঘটনার খবরই শুনছি। নিজেও পটুয়াখালী আসার পথে একটুর জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি। তাই লঞ্চে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাসের থেকে অন্তত নিরাপদে তো যেতে পারবো।

যদিও পদ্মা সেতু চালুর পর সময় স্বল্পতার কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা সড়ক পথে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতের দাবি বেশিরভাগ যাত্রীর।

ঢাকা-পটুয়াখালী সড়কপথে নিয়মিত চলাচলকারী বাস যাত্রী ফাহিম রহমান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতিনিয়ত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটের মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত দীর্ঘ মহাসড়কের ধারণক্ষমতা আছে ২০২২ সালের আগের মতোই। যদিও কিছু কিছু বাঁকে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে, তবে তা কার্যত তেমন উপকারে আসছে না এখনও। এই যাত্রীর মতে, প্রয়োজন অনুসারে মহাসড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় গতির প্রতিযোগিতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

সম্প্রতি দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী মিজানুর রহমানের মতে, ঈদ-কোরবানির সময়টায় চালকরা একটানা বেশি ডিউটি করায় ক্লান্ত থাকেন। আর যেখান থেকে ঘুমের ভাব হলেই দুর্ঘটনা ঘটে। যে কারণে তিনিও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এখন নিয়মিত লঞ্চে যাতায়াত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে গণমাধ্যমও বলছে, ১৫ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ছয়দিনে শুধু বরিশাল জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৯ জন। পক্ষান্তরে নৌ-পথে দুর্ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি এ কয়দিনে।

বাস চালকরা বলছেন, শুধুই গতি নয়, অনভিজ্ঞ চালকসহ মহাসড়কে বৈধ-অবৈধ ও মিশ্র প্রযুক্তির গাড়িই দুর্ঘটনার মূল কারণ।

বাসের চালক নয়ন বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত একমাত্র মহাসড়ক, যেখানে অবাধে দূরপাল্লার গাড়িগুলোর সাথে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, টমটম, নছিমন, করিমন, সিএনজি, আলফাসহ সকল ধরনের থ্রি-হুইলার চলাচল করে। অথচ বিআরটিএর অনুমোদন পাওয়া-না পাওয়া এসব যানবাহন মহাসড়কে চলার কথা না। সেই সাথে বাজার-ঘাটে ঘেরা মহাসড়কে অটো ও ম্যানুয়াল প্রযুক্তির গাড়ির পাশাপাশি, তেলের- ব্যাটারির, নতুন-পুরাতন বিভিন্ন গতির গাড়ি চলাচল করছে।

আরো পড়ুন : পটুয়াখালীতে চাচার মারধরে ভাতিজার মৃত্যু

তিনি আরো বলেন, সবমিলিয়ে দিনের বেলা যেমন তেমনভাবে গেলেও রাতে তো আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে ভাঙ্গা-বরিশাল- কুয়াকাটা মহাসড়ক। ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, টমটম, নছিমন, করিমনের মতো অবৈধ অনেক যানবাহনের তো কোনো ধরনের বাতিই থাকে না, আবার যাদের আছে তাদের গাড়ির সামনে পেছনের সবগুলো বাতি ঠিকভাবে জ্বলে না। ফলে গাড়িটা কতখানি প্রশস্ত কিংবা চালক ব্রেক কষল কিনা তা বোঝা যায় না। সবমিলিয়ে যে অবস্থা তাতে এ মহাসড়কে বাস চালনা করতে একজন চালককে কতটা বেগ পেতে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। আর হিসেবের গড়মিল হলেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন দোষ হয় পরিবহন চালকদের।

পরিবহন চালকদের মতে দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে মহাসড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি সর্বপ্রথমে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে, নয়তো বিমুখ হবেন বাস যাত্রীরা। একই কথা জানালেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারাও।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল মোল্লা মুঠো ফোনে বলেন, এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সর্বপ্রথম মহাসড়ক প্রশস্ত করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ চলাচলে জায়গায় জেব্রা ক্রসিংসহ রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা রাখা এবং মহাসড়কের পাশ ধরে হাঁটার জায়গা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, রাস্তা সরু হওয়ায় বর্তমান সময়ে ওভারটেক করতে গিয়ে যেমন দুর্ঘটনা ঘটছে, তেমনি রাস্তার পাশে চলাচলের জায়গা না থাকায় মানুষ যানবাহনে চাপা পড়ছে। গেল কোরবানির ঈদের আমরা গরুর গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচলের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীবাহী যানবাহনের ছাদে লোক না নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক ছিলাম। সেইসাথে মহাসড়কে অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলাচল রোধ, থ্রি-হুইলারসহ আনফিট গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। আর এজন্য বিভিন্নভাবে মহাসড়কে আমাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে। তবে নিজ নিজ পর্যায় থেকে সবাইকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ এই কর্মকর্তার।

এদিকে এবারের ঈদে পটুয়াখালী-ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বিগত দিনগুলোর থেকে বেশি থাকায় খুশি সংশ্লিষ্টরা।




কলাপাড়ার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে তিন লক্ষাধিক মানুষ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলের তিন লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করা, বছরের পর বছর বৃষ্টির পানিতে বেড়িবাঁধের উচ্চতা কমতে থাকলেও মাটি দিয়ে এর উচ্চতা বৃদ্ধি না করাই এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ।

কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২.১০ বর্গ কি.মি। এখানে ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় ২৪৪টি গ্রাম রয়েছে। উপজেলা ২২টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি বেড়িবাঁধ বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও প্রতি অমাবস্যা আর পূর্ণিমার সময় এলাকার মানুষ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় থাকে আতঙ্কিত।

জানা যায়, গত এক দশকে মে মাসে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ৪৭/৪ পোল্ডারের মিঠাগঞ্জ বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে বাঁধের রিভার সাইডের মূল বাঁধসহ জিওব্যাগ ধসে আন্ধারমানিক নদীতে পড়ে গেছে।
ভাঙন শুরু হয়েছে বাঁধের কান্ট্রি সাইডেও। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাঁটল। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

৪৬ পোল্ডারের নীলগঞ্জ ইউনিয়নে গইয়াতলা গ্রামের ভাঙা বাঁধ সংলগ্ন ছয়টি গ্রামের মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। বাঁধসহ স্লুইসগেট ভেঙে পড়ার পর এবার বেড়িবাঁধ ভেঙে পড়ার চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে এলাকার মানুষ। সোনাতলা নদীর ঢেউয়ের তোরে গইয়াতলা বেড়িবাঁধের রিভার সাইডের বাঁধ ভেঙে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ফাটল।

এদিকে, ৪৭ পোল্ডারের মহিপুর ইউনিয়নে সিডরের পর থেকে নিজামপুর ৫ গ্রামের মানুষ ১০ বছর ধরে জমিতে কোনো চাষ করতে পারেনি। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানের রিং বেড়িবাঁধ করে দেয়। এখন আবার নতুন করে আতঙ্কে ভুগছে। হুমকিতে পড়ছে উপজেলা নিজামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন করে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। সাগর ও নদীর প্রতিটি জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বসতঘর, আবাদি জমি ও মাথাগোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু। নিঃস্ব হতে হতে এই গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল এখন শুধুই বেঁচে থাকার আকুতি। এভাবে পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সীপাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ি, খ্রিস্টান পাড়ার বেড়িবাঁধ।

আরো পড়ুন : পূর্ব বিরোধের জেরে বাউফলে বৃদ্ধকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

এলাকাবাসীর দাবি, ত্রাণ চাই না শুধু বাঁধ চাই। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিশ্চিহ্ন আন্দারমানিক নদী তীরবর্তী এলাকার হাজারো পরিবারের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যদিয়ে। ভয়াবহ ভাঙন ও তীর রক্ষাবাঁধ ধসে যাওয়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় তাদের মধ্যে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পুরো বাঁধ ভেঙে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়বে গোটা কলাপাড়া উপজেলা।

স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ সম্ভব। তবে বর্ষার আগ মুহূর্তে যখন নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ কানায় কানায় পূর্ণ হয়, পাউবো কর্তৃপক্ষ সে সময় এসে মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। প্রতি বছরের মে মাস এলেই পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের তোড়জোড় শুরু করে। কী কারণে তা কেউ বলতে পারে না। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা। বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টির জন্য পাউবোর লোকজন অসময়ে এসে কাজ ধরেন।

মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ফজলু গাজী জানান, এ এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মৎসজীবী। আবার কেউ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শুধু অমাবস্যা-পূর্ণিমাই নয়, জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। পূর্বের বেড়িবাঁধ নেই।

পাউবোর উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, পাউবোর পূর্ব গৈয়াতলা, লেমুপাড়া, চম্পাপুর, মঞ্জুপাড়া, মুন্সীপাড়া, নিজামপুর, জালালপুর, ধূলাসার, বালিয়াতলী, দেবপুর, নাচনাপাড়া, বড়কলবাড়ী, খ্রিস্টানপাড়া, চরান্ডা, চর মোন্তাজ, চালিতবুনিয়া বড় বাইশদিয়া বেড়িবাঁধের ২২টি স্পটে ৯.১৯ কি. মি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকতাদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। তারা বলছে বেড়িবাঁধগুলো পর্যায় ক্রমে মেরামত করা হবে।




যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছেন বরিশালের গৌরনদীর দধির সুখ্যাতি

বরিশাল অফিস :: ভারতের কলকাতার পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা বলরাম ঘোষ প্রায়ই আসেন বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বরিশালের গৌরনদী উপজেলায়। স্বজন-পরিচিতদের বাড়িতে বেড়ানো হয়ে গেলে যখন তল্পিতল্পাসহ কলকাতা ফেরেন তখন যে জিনিসটি নিতে কখনোই ভুল করেন না তা হলো গৌরনদীর দধি।

বলরাম ঘোষ বলেন, কলকাতায় মিষ্টান্নের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। বিশেষ করে মিষ্টি ও দধির আলাদা ঐতিহ্য আছে। কলকাতায় সাধারণত দুই ধরনের দধি হয়। সেসবের চেয়ে আমার কাছে গৌরনদীর ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের দধি অনেক ভালো ও সুস্বাদু লাগে। গৌরনদীর দধির ঘনত্ব কলকাতার দধির চেয়ে পুরু। গৌরনদীর দধি এখনো মুখে দিলে খাটি গরুর দুধের অতুলনীয় স্বাদ জিভে লেগে থাকে। আমি যতবার এসেছি, সব কিছু ভুলে গেলেও গৌরনদীর দধি নিতে ভুল করিনি। আমার পরিবারেও এই দধির জনপ্রিয়তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়।

গৌরনদী হচ্ছে বরিশাল বিভাগের প্রবেশদ্বার। ঢাকা থেকে বরিশাল অভিমুখে রওয়ানা দিলে সবার প্রথম যে জনপদ আপনাকে স্বাগত জানাবে তা গৌরনদী। উপজেলাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এর ব্যবসায়িক সফলতার জন্য। এক সময়ে এই উপজেলার টরকি বন্দর পুরো জেলার ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল। সড়ক পথের উন্নতি, টেলিকমিউনিকেশন সহজলভ্য হওয়ায় চাল, ডাল, পোশাকের জন্য সেই বিখ্যাত টরকি বন্দরের নাম ফিকে হয়ে এসেছে। কিন্তু সড়ক পথ আর টেলিকমিউনিকেশনের কারণে ব্যবসার প্রসার বেড়েছে দধির। প্রতিদিন উৎপাদনমুখী কারখানাগুলোতে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার অর্ডার আসে। ঈদ, পূজা বা বাংলা বর্ষবরণের মতো অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে চাহিদা বাড়ে আরও। তখন দম ফেলার ফুরসত পান না কারিগররা।

কারিগর গোকূল চন্দ্র রায় বলেন, সারা বছরই কারখানায় দধির অর্ডার থাকে। উৎসব-পার্বন এলে অর্ডারের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। তখন আমরা খাওয়া-দাওয়ারও সময় পাই না। যেহেতু এক কেজি দধি তৈরি করতে কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা থেকে ৯৬ ঘণ্টার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার ওপরে গৌরনদীর দধির প্রতি মানুষের যে আস্থা তা মাথায় রেখে কষ্ট হলেও দধির মানে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। রমজানের ঈদ, কোরবানি, পূজা, পহেলা বৈশাখ এলে এক-দুই মাসের জন্য আমরা বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেই। সকাল ৮টায় কারখানায় আসি আর রাত দেড়টা বা ২টায় ঘুমাতে যেতে পারি।

সুখ্যাতির গোপন রহস্য কী? ::

প্রায় দুইশ বছর ধরে স্বাদ আর সুখ্যাতির শীর্ষে রয়েছে গৌরনদীর দধি। দধির জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবসায় নেমেছেন উদ্যোক্তা, মুনাফা খাটিয়ে ফেরাচ্ছেন সচ্ছলতা। বরিশাল বিভাগ ছাপিয়ে ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, মোড়েলগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোরের অসংখ্য দোকানে প্রতিদিন দধি যাচ্ছে এখান থেকে। গৌরনদী উপজেলার সবচেয়ে পুরাতন দুজন ময়রার হাত ধরে দধির সুখ্যাতি আসে। একজন সচীন ঘোষ, আরেকজন ননী ঘোষ। এর মধ্যে সচীন ঘোষ বেঁচে নেই। ননী ঘোষ এখনো ব্যবসার হাল ধরে আছেন। এই ঘোষ বংশের কারিগর রানা ঘোষ ২০০০ সালে আমেরিকায় পারি জমান। সেখানেও তিনি দধি উৎপাদন শুরু করেছিলেন।

যতদূর জানা যায়, গৌরনদীর দধির ইতিহাস অনেক পুরোনো। প্রায় আড়াই শ বছর আগে ডাওরি ঘোষ নামে এক ব্যক্তি গৌরনদীতে দধি তৈরি করে বেশ সফলতা পান। বংশ পরম্পরায় সেই ধারা ধরে রেখেছেন শচীন ঘোষ, ননী ঘোষ, গেদু ঘোষ, সুশীল ঘোষ, দিলীপ দাসসহ আরও অনেকেই।

কারখানা মালিক গৌরাঙ্গ ঘোষ বলেন, গৌরনদীর দধির ইতিহাস দুইশ বছরেরও বেশি। আমি যে দোকানটি চালাচ্ছি সেটির বয়সই ৭৫ বছর হবে। তার আগে আমার বাবা, দাদা একই ব্যবসা করেছেন। গৌরনদীর দধি জনপ্রিয় হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া আলাদা। বিভিন্ন অঞ্চলে যে দধি তৈরি করা হয় তা ৭/৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রস্তুত শেষ হয়ে যায়। আমাদের গৌরনদীর দধি কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। সেখান থেকে খাবারের জন্য পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত করতে আরও ২৪ ঘণ্টা নির্ধারিত তাপমাত্রায় রাখা হয়।

তিনি বলেন, গ্রামের গৃহস্থের গোয়ালের গরু থেকে আমাদের সরবরাহকারীরা দুধ দোহন করে নিয়ে আসেন। তার ঘনত্ব পরীক্ষা শেষে বড় কড়াইতে ১০০ ডিগ্রিরও বেশি তাপমাত্রায় ফুটাতে হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে তারপর ঘন দুধ নামিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা ঠান্ডা করে তাতে পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে আবারো উনুনে উঠিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। এরপর তা নামিয়ে হাড়িতে ঢেলে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা করার জন্য রাখা হয়। ঠান্ডা করার পর সেই হাড়িভর্তি দধি চুলার অল্প আঁচে রাখা হয় ৬-৭ ঘণ্টা। সেখান থেকে নামিয়ে আবারও ২৪ ঘণ্টার জন্য ঠাণ্ডা করতে রাখা হয়।

আরেক কারখানা মালিক শ্যামল চন্দ্র ঘোষ বলেন, দধিতে স্বাদ আনতে এত দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমাদের কারখানার বয়সও ৭০-৭৫ বছর হবে। বাবাকে দেখেছি স্বাদ ও সুখ্যাতি ধরে রাখতে খাঁটি দুধ কিনতে কখনো কার্পণ্য করেননি। তিনি এখনো এই ব্যবসার প্রধান। তার নির্দেশনা অনুসারেই আমরা ব্যবসায় সফলতা পেয়েছি। সারাদিন দধি কিনতে দোকানে লোকজন ভিড় করে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অর্ডার আসে।

পুরাতন ব্যবসায়ী ননী ঘোষ বলেন, গৌরনদীর দধির স্বাদ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। তারপরও যা আছে তা দেশের অন্য কোনো দধির নেই। স্বাদ কমার কারণ হচ্ছে আগে দেশি গরুর দুধ পাওয়া যেত। এখন সব খামারের গরুর দুধ। দেশি গরুর প্রধান খাবার হচ্ছে ঘাস। কিন্তু খামারে কৃত্রিম খাবার খাওয়ানো হয়।

কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা :

গৌরনদী উপজেলায় বেশ কয়েকটি স্থানে দধি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ননী ঘোষের গৌরনদী ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার আর সচীন ঘোষের গৌরনিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডার সবচেয়ে বড় আর নামকরা। এই কারখানায় দধির পাশাপাশি শুকনা মিষ্টি, রসগোল্লা, রস মালাই, ক্ষীরপুরি, রসমঞ্জুরী, চমচম, কালোজাম, সন্দেশ ও বালুশাহ্সহ ১৪ প্রকারের মিষ্টিজাত খাদ্যপণ্য তৈরি হয়। গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহকারী, কারখানার সহযোগী, কারিগর, বিপনন মিলিয়ে দুটি কারখানায় দুই শতাধিক জনবল কাজ করেন।

খোকন হাওলাদার নামে এক কর্মী বলেন, আমি গ্রামে গ্রামে হেঁটে দুধ সংগ্রহ করে কারখানায় দেই। এই কাজ করে আমার সংসার চলে। কারখানা না থাকলে আমার বেকার থাকতে হতো।

আরেক কর্মী রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, দধির কারখানা চালু থাকায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাজের ব্যবস্থা হয়েছে। দধি উৎপাদন কারখানা কেন্দ্রিক কাজে অন্তত এলাকার মানুষ ভালো আছি। কাজের জন্য আমাদের দূর-দূরান্তে যেতে হয় না। অল্প হলেও কর্মসংস্থানের যে ব্যবস্থা হয়েছে তা সবার জন্য ভালো।

মিন্টু হাওলাদার নামে এক কর্মী বলেন বলেন, গৌরনদীর উন্নতির পেছনে দধির ব্যবসার বড় অবদান। এই অঞ্চলকে মানুষ এখন দধির জন্য গুরুত্ব দেয়।

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দাবি ::

স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক রাশিদা খানম বলেন, গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, স্বাদে অসাধারণ। যুগ যুগ ধরে খাচ্ছি। কিন্তু এর স্বাদের কমতি হয়নি। বাবা-দাদার হাত ধরে যখন মিষ্টি খেতে আসতাম তখন যে স্বাদ ছিল এখনো দধি মুখে দিলে সেই আদি স্বাদ সুন্দর অনুভূতি দেয়। গৌরনদীর দধি দেশ ও দেশের বাইরে তার স্বনামে বিখ্যাত। এই দধিটির জিআই স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় বাসিন্দা জিএম জসীম হাসান বলেন, ১৫০ টাকা কেজি দরে দধি পাওয়াটা কিন্তু অনেক সাশ্রয়ী। এই দধি আমাদের উপজেলা, এই জনপদকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন গৌরনদীর দধিকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে যেন গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী এই ব্যবসাকে সম্মানিত করা হয়।