গরমে ঠান্ডা পানিতে যত ক্ষতি




গরমে লাউ খেলে কী কী উপকারিতা মিলবে, জেনে নিন




গরমে ত্বক ভালো রাখার সহজ ৪ উপায়




গরমে অতিরিক্ত ঘাম? এই ৫ খাবার এড়িয়ে চলুন




শুধু গরমে নয়, আয়রনের ঘাটতিতেও হয় প্রচণ্ড দুর্বলতা ও হার্ট ফেইলিওর

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক : এই গরমে সুস্থ থাকাটাই এখন চ্যালেঞ্জের। এ সময় অনেকেই শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় বিশেষ করে দূর্বলতা, ক্লান্তি ও মাথা ঘোরার মতো লক্ষণে ভুগছেন। শুধু গরমের কারণে নয়, শরীরে আয়রনের অভাবে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি আয়রনের অভাবে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।

আয়রনকে শরীরের প্রতিরক্ষামূলক ঢাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি শক্তি দেয় ও শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। আয়রন হিমোগ্লোবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা লোহিত রক্তকণিকায় পাওয়া যায়। হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো ফুসফুস থেকে অন্য অঙ্গে অক্সিজেন পরিবহন করা। কাজেই, আয়রনের ঘাটতি হলে পুরো ব্যবস্থাই নড়ে যায়।

যেহেতু আয়রন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, তাই এর ঘাটতি অনেক রোগের কারণ হয়। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরে কম আয়রনের কারণে ক্লান্তি সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। শরীরের বিভিন্ন অংশে অপর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছানোর কারণে ক্লান্তি অনুভূত হয়। এতে দুর্বলতা ও মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে।

শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব হয়, যে কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ব্যায়াম, হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় এই সমস্যা বাড়ে।

আয়রন শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নয় মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে। এর অভাবে মাথাব্যথার সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় আয়রনের ঘাটতির কারণে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে, কারণ এমন পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না।

সেরোটোনিন ও ডোপামিন উভয়ই শরীর ও মস্তিষ্ককে শিথিল রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। আয়রনের মাত্রা কম হলে শরীরে এই দুটি হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে ঘুমের ওপর। ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে।

হাত পা প্রায়ই ঠাণ্ডা থাকলে সতর্ক থাকুন, কারণ এটি আয়রনের ঘাটতির লক্ষণও হতে পারে। আয়রনের ঘাটতির কারণে যখন শরীরে অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছায় না, তখন এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।

সূত্র: এবিপি নিউজ




ব্রেকআপের কষ্ট ভোলার উপায়




সানস্ক্রিন মাখলেই মুখ ঘামে? যা করবেন

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক:  তাপমাত্রার পারদ ৪০ এর নিচে নামছেই না। কাঠফাটা রোদে বেরোলে ত্বক পুড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে বের হওয়া মানে ত্বকের বিপদ ডেকে আনা।

বছরের ৩৬৫ দিনই সানস্ক্রিন প্রয়োজন। তবে এই গরমে সানস্ক্রিন মাখলে অনেকেই মুখ অতিরিক্ত ঘামছে। এক্ষেত্রে কী করণীয়?

এই সমস্যার সম্মুখীন অনেকেই হন। তাই সানস্ক্রিন এড়িয়ে চলেন। তবে এই রোদে সানস্ক্রিন না মাখলে চলবে না। তাই এমন উপায় বেছে নিতে হবে যার ফলে সানস্ক্রিন মাখলেও ত্বকে ঘাম হবে না।

এক্ষেত্রে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নেওয়া জরুরি। আর কোন কোন নিয়ম মানলে মুখে অতিরিক্ত ঘাম হবে না, জেনে নিন-

১. এসপিএফের মাত্রা দেখে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। তৈলাক্ত ও স্পর্শকাতর ত্বক ৩০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন মাখুন।

ত্বকের ধরন স্বাভাবিক হলে এসপিএফ ৪০ যথেষ্ট। তবে এখন রোদের তেজ মারাত্মক। এই অবস্থায় ট্যান এড়াতে ৫০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

২. ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন বেছে নেওয়া জরুরি। আপনার ত্বক স্বাভাবিক হলে যে কোনো ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া তৈলাক্ত ও স্পর্শকাতর ত্বকে আপনি জেল, স্প্রে, স্টিক ইত্যাদি ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।

৩. টিন্টেড সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এতে ঘাম কম হবে। নন-কমেডোজেনিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এতে ঘাম ও ব্রণের সমস্যা কমতে পারে।

৪. সানস্ক্রিন মাখার আগে তাতে সামান্য পানি মিশিয়ে নিন। এতে সানস্ক্রিনের ঘনত্ব পাতলা হয়ে যায়। এভাবে সানস্ক্রিন মাখলে পণ্যটি রোমকূপের ভেতর ভালো করে প্রবেশ করে। এতে ত্বক শীতল থাকে ও ঘাম কম হয়।

৫. রোদে বের হওয়ার কমপক্ষে ২০ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিন মাখুন। দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে ২-৩ ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন মাখুন। এতে ত্বককে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

সূত্র: টিভি ৯




তীব্র দাবদাহে শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা

বরিশাল অফিস :: চলমান তীব্র দাবদাহে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই বেশ কিছু এলাকায় আগাম রোপিত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অসহনীয় গরমের মধ্যে কাজ করা দিনমজুররা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। ঘামের সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি বের হওয়ার পর সেই ঘাটতি পূরণ না হওয়ায় অনেকের শরীরে দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা। প্রচন্ড দাবদাহের কারণে ডায়রিয়া, বমি ও জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব রোগীদের শরীরেও দেখা দিয়েছে পানির ঘাটতি। অনেক সময় অতিরিক্ত শরীরচর্চার কারণেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মাহাবুব আলম মির্জার মতে, শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে পানির পাশাপাশি খনিজ পদার্থেরও ঘাটতি হয়। তাই এ সময় ডাব ও স্যালাইন পান করতে পারেন। আবার পটাশিয়ামের অভাব পূরণের জন্য নিয়মিত পাকা কলাও খেতে পারেন। তবে এড়িয়ে চলতে হবে কফি খাওয়া। অতিরিক্ত কফি শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। তাই গরমে কফি ও তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে বেশ কিছু ফল রয়েছে, যা আপনার শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম।

লেবু ॥ গরমে প্রশান্তি পেতে কমবেশি সবাই লেবুর শরবত পান করেন। ভিটামিন সি যুক্ত এই ফলের রস আপনাকে সতেজ অনুভূতি দেবে সারাদিন। তবে লেবুর শরবতে খুব বেশি চিনি মেশাবেন না। লেবুতে থাকা পটাশিয়াম শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীরে খনিজের যে ঘাটতি তৈরি হয়, তার অনেকটাই পূরণ করে লেবু। লেবুর প্রায় ৮৮ শতাংশই পানি।

তরমুজ ॥ গ্রীস্মকালীন ফল তরমুজ। বাজারে বেশ সহজলভ্য ফলটি। গরমে একটু স্বস্তি পেতে খেতে পারেন এই ফল। এটি শরীরে জলের অভাব পূরণ করে। তরমুজে শতকরা ৯০ ভাগের বেশি পানি থাকে। ফলে পানিশূন্যতারোধে এটি হতে পারে একটি উপকারী খাবার। সাথে রয়েছে-ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট লাইকোপিন ও ম্যাগনেসিয়াম। যা তীব্র গরমেও আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। তরমুজ ফ্রিজে রেখেও খেতে পারেন। তবে তরমুজ খাওয়ার পরপরই পানি পান করবেন না।

টমেটো ॥ টমেটো এখন প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায়। টমেটো রান্না কিংবা কাঁচা, যেভাবেই খাবেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় কাঁচা টমেটো খেলে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন সি, ক্রোমিয়াম, ফোলেট, ফাইবার, পটাশিয়াম ও ফাইটোকেমিক্যালের উপকারী পুষ্টি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত টমেটো খেলে ক্যান্সার, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

শসা ॥ গরমের আরেকটি সেরা ফল হল শসা। এটি পানিশূন্যতারোধ করতে সাহায্য করে। শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। শসার প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি। এই ফলের সবচেয়ে উপকারী গুণ হলো, এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। নিয়মিত শসা খেলে দূর হয় শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ। এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিসকার রাখে। শসা খেলে গরমে শরীর ঠান্ডা থাকে।

ডাব ॥ শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে এবং ইলেক্ট্রলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে ডাবের পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই প্রতিদিন ডাব ক্রয় করে খাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। সেক্ষেত্রে তারা বিকল্প হিসেবে স্যালাইন পানি পান করতে পারেন।

ডাঃ শাহনাজ রুবি’র মতে, গরমের সময় ভারি খাওয়ার পর ডিটক্স পানি পানি করা যেতে পারে। ডিটক্স ওয়াটার হলো-পানি, লেবুর রস, শশা, গাজর, পুদিনা ইত্যাদির রসের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের পানিয়। এ ছাড়া মশলা জাতীয় ভারি খাবার খেতে ভালো লাগলেও গরমের সময় কম মশলা জাতীয় খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য। বাজারে এখন ঝিঙ্গা, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, শাকের ডাঁটা ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে যদি পাতলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া হয়, তাহলে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা জোগাবে, অপরদিকে শরীরে গরম অনুভব কম হবে।

গরমে নিরাপদ পানি পানের কোন বিকল্প নেই জানিয়ে ডাঃ মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গরমের সময় ঘাম ও প্রসাবের সাথে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বের হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার বা ১২ থেকে ১৩ গ্লাস পানি পান করা উচিৎ। পাশাপাশি এখন দেশের সর্বত্রই কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা আমের মাঝে ভিটামিন-সি থাকে। কাঁচা আমের সাথে মরিচ যুক্ত না করে যদি এটিকে শরবত হিসেবে খাওয়া যায় তাহলে গরম কম অনুভব হবে। এ ছাড়া প্রচন্ড গরমে পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টকদই খাওয়া যেতে পারে।

প্রতিদিন বাড়ছে তাপমাত্রা। বাড়ছে গরম। এ সময় পিপাসায় গলা শুকিয়ে যায়। পানির চাহিদা বেশি থাকে। তাই নরমাল পানির চেয়ে ফ্রিজের পানির প্রতি চাহিদা বেশি থাকে। পাওয়া মাত্রই খাওয়া শুরু করে দেন অনেকেই কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর জানিয়ে ডাঃ কাজী শিউলী বলেন, রোদ থেকে ঘুরে এসে ঢক ঢক করে ঠান্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া গেলেও শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পরে। হঠাৎ করে শরীরে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করার ফলে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পরে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে।




সুখী হতে কী লাগে?




বরিশালে চাপকলে উঠছে না পানি বিপাকে মানুষ

নগরের পর এবার বরিশালের আশপাশের গ্রামেও একে একে অকেজো হচ্ছে টিউবওয়েল। দীর্ঘসময় চাপার পরও এসব কলে উঠছে না পানি। শনিবার বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর সঙ্গে চাপকলে পানি না ওঠার নতুন এ বিপদ যোগ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

উত্তাপের বিপদ সংকেতের মধ্যেই মাইলের পর মাইল দূরে গিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে তাদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে সংকটাপন্ন এলাকাগুলোয় ১৩০টি মেশিনে চলা পানির পাম্প বসানোর কাজ করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে তাতে সংকটের ছিটেফোঁটাও মিটবে না বলছে ওইসব এলাকার জনগণ।

বরিশাল নগর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন। সেখানকার বাসিন্দা নূর ইসলাম (৫২) বলেন, গত ক’দিন এখানে কোনো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চাপার পরও একই অবস্থা।

একই কথা বলেন নগরসংলগ্ন কাশিপুর ইউনিয়নের তিলক কলাডেমা এলাকার বাসিন্দা রায়হান মল্লিক। তিনি বলেন, গরমের তীব্রতা বাড়ার আগে ২-১টা টিউবওয়েলে যাও পানি উঠত এখন আর তাও মিলছে না। আশপাশের যেসব বাড়িতে টিউবওয়েলের সঙ্গে পানি ওঠানোর পাম্প (সাবমারসিবল) লাগানো আছে তারাই কেবল পানি পাচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ টিউবওয়েল ব্যবহার করি তাদের টিউবওয়েল অনেকক্ষণ চাপার পরও পানি ওঠে না।

জাগুয়া ইউনিয়নের হুমায়ুন কবির বলেন, পানি না ওঠার কারণ জানতে গিয়েছিলাম উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। তিনি বলেছেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে নাকি এ অবস্থা হয়েছে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উপরিভাগ থেকে ৮-১০ ফুট নিচে থাকলে চাপকল চেপে পানি ওঠানো সম্ভব। কিন্তু বরিশাল নগরসংলগ্ন ৫টি ইউনিয়নের পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে টিউবওয়েল চেপে সেই পানি ওঠানো যাচ্ছে না।

এটা ঠিক এখনও মাটির ৯১০ থেকে ৯২০ ফুট নিচেই মিলছে সুপেয় পানি। কিন্তু স্তর চাপের অবস্থান ৮-১০ ফুট থেকে নেমে চলে গেছে ২৩-২৪ ফুট নিচে। যে কারণে একই সঙ্গে বিকল হয়ে পড়েছে শত শত টিউবওয়েল। এ সমস্যা দেখা দিয়েছে নগরসংলগ্ন ৫ ইউনিয়নে। আবার এসব ইউনিয়নের যে জায়গাগুলো নগর থেকে খানিকটা দূরে সেখানে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে চরবাড়িয়া, চরকাউয়া, রায়পাশা-কড়াপুর, কাশিপুর এবং জাগুয়া ইউনিয়নে। সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার সময় এসব ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা নগরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্ধিত এলাকা নামে পরিচিত সেসব এলাকাতেই বেশি সমস্যা হচ্ছে। বরিশাল নগর এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নিম্নগামিতা কিন্তু আরও ভয়াবহ। মূলত তার প্রভাবই পড়ছে নগরসংলগ্ন এসব ইউনিয়নের ভূগর্ভস্থ স্তরে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান বলেন, বরিশাল নগরে টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৮-১০ বছর আগে। অগণিত বহুতল ভবন নির্মাণ ও এসব ভবনের বাসিন্দাদের পানির চাহিদা মেটাতে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসিয়ে পানি ওঠানোর কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুগ যুগ ধরে এভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে আনায় ভূ-উপরিতল থেকে মাত্র ৮-১০ ফুট নিচে থাকা পানির স্তর নেমে গেছে ৪২-৪৩ ফিট নিচে।

ফলে এখন যে কেবল টিউবওয়েলে পানি উঠছে না তা নয়, সুপেয় পানির স্তর পর্যন্ত তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। আগে যেখানে বরিশাল নগরে ৭৫০ থেকে ৮শ ফুট নিচে গেলেই মিলত বিশুদ্ধ পানি সেখানে এখন সাড়ে ৯শ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। এখনই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো বরিশাল নগরে পানির হাহাকার পড়বে।

রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবু বলেন, এখানে কোনো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পুরো ইউনিয়নে হাতে গোনা কিছু সাবমারসিবল রয়েছে। খাবার পানি সংগ্রহে সেগুলোতেই ছুটতে হয় মানুষকে।

এছাড়া গোসলসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে পুকুর কিংবা খালের পানি। চলমান হিট অ্যালার্মে একটু খাবার পানির জন্য মানুষ যে কতটা কষ্ট করছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানো যাবে না। কথা ছিল জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় এখানে বেশ কিছু ডিপ টিউবওয়েল বসানো হবে। কিন্তু টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় এখন নাকি তাও বসানো হবে না।

বরিশাল সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবু সালেহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। আলোচ্য ৫ ইউনিয়নে আমাদের দেড় হাজারের মতো টিউবওয়েল রয়েছে যার অধিকাংশই কাজ করছে না।

রাজস্ব খাতভুক্ত একটি প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে এসব ইউনিয়নে ১৩০টি টিউবওয়েল বসানোর কাজ চলছে। এসব টিউবওয়েলে সাবমারসিবলের পাশাপাশি জলাধার বসানোর কাজ করছি আমরা। এখানে প্রতিটি টিউবওয়েলের সাথে থাকা জলাধারেও সংরক্ষিত থাকবে পানি। আগে যেসব সাবমারসিবল বসানো হয়েছে তার সঙ্গে এগুলো যোগ হলে পানির সমস্যা অনেকটা দূর হবে বলে আশা করছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালেই মূলত সমস্যাটা বেশি হয়। বিশেষ করে গত ২-৩ বছর যাবত। এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বর্ষাকালে কিন্তু পানির স্তর ৮-১০ ফুটের মধ্যে চলে আসে। তখন সব চাপকলই কাজ করে। এ বছর গরমের শুরু থেকেই পানি উঠছে না। সমস্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি আমরা। আশা করি খুব শিগগিরই এই সমস্যা সমাধানে বড় ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।