ট্রাম্পের ঝুলিতে মুসলিম-আরব ভোট

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: এক ঐতিহাসিক রদবদলে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি দুই দশকের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসছেন মুসলিম ও আরব ভোটাররা। মঙ্গলবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তৃতীয় দলের প্রার্থীদের ঝুলিতে তাদের অধিকাংশের ভোট পড়েছে।

গাজার যুদ্ধকে বাইডেন প্রশাসন যেভাবে পরিচালনা করেছে তা নিয়ে তৈরি হওয়া ক্ষোভ এই দলত্যাগে ইন্ধন জুগিয়েছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলিতে ট্রাম্পকে জয়ী করতে সহায়তা করেছে। হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করেছেন।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস ১ হাজারের বেশি ভোটারকে নিয়ে একটি এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষা করেছিল। এই জরিপ অনুযায়ী, মুসলিম ভোটারদের অর্ধেকেরও কম হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। সিএআইআরের সরকার বিষয়ক পরিচালক রবার্ট ম্যাককো বলেছেন, এদের অধিকাংশই তৃতীয় দলের প্রার্থী বা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।

ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাককো বলেছেন, “গত ২০ বছরে এই প্রথম মুসলিম সম্প্রদায় তিনটি প্রার্থীতে ভাগ হয়ে গেছে।”

সিএআইআরের বুথফেরত সমীক্ষার তথ্য বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হতে চলেছে।

মুসলিম ভোটে রদবদল

আরব আমেরিকান ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট জেমস জগবি বলেছেন, আরব আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে মুসলিম ভোট রদবদলের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল। এরা দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের (২ থেকে ১) সমর্থন করে এসেছিল।

ভয়েস অব আমেরিকাকে জগবি বলেন, “তারপর এই নির্বাচন এল যেখানে গাজা একটা প্রভাব ফেলেছে এবং এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিপুল পরিমাণে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল; আমি ভাবতেই পারিনি এটা এতটা প্রভাব ফেলবে। গাজায় তারা যা ঘটতে দেখেছে তা তাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।”

যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৩৭ লক্ষ আরব আমেরিকান রয়েছেন যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান এবং একই সংখ্যক মুসলিম আমেরিকানও রয়েছেন।

মিশিগানে আরবদের শক্ত ঘাঁটিগুলো হল ডিয়ারবোর্ন, ডিয়ারবোর্ন হাইটস ও হ্যামট্রামাক। সেখানে ভোটারদের এই বিদ্রোহ সবচেয়ে জোরালো।

ডিয়ারবর্নের এক হুক্কা লাউঞ্জে ‘ট্রাম্পের পক্ষে আরব আমেরিকান’ গ্রুপের সদস্যরা টেলিভিশনে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ভাষণ দেখে উল্লাস করছেন
ডিয়ারবোর্নের বাসিন্দাদের ৫৫ শতাংশের বেশি মধ্যপ্রাচ্য-বংশোদ্ভূত। ট্রাম্প এখানে ৪২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছেন। চার বছর আগে তিনি এই অঞ্চলে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। হ্যারিস মাত্র ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, অথচ এই জনগোষ্ঠী তাদের ভোটের প্রায় ৭০ শতাংশই উপুড় করে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মুসলিম সংখ্যাগুরু শহর হ্যামট্রামাকে ট্রাম্প মোট ভোটের ৪৩ শতাংশ লাভ করেছেন। তিনি ২০২০ সালে এই শহরেথেকে মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। হ্যারিস পেয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোট, যেখানে চার বছর আগে বাইডেন পেয়েছিলেন ৮৫ শতাংশ ভোট।

গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের কঠোর সমালোচক। তিনি এই দুই শহরে ২০ শতাংশের কম ভোট টানতে পেরেছেন।

ডিয়ারবোর্ন-ভিত্তিক রিয়েলটর ও রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী সামরা লুকমান বলেছেন, এই রদবদল “একেবারে বিস্ময়কর এবং সত্যি, সত্যিই দারুন।”

গাজা ইস্যুতে দল বদল করার আগে গত শরতে বাইডেনের হয়ে প্রচার করেছিলেন লুকমান।

শেষবার মুসলিম মার্কিনিরা ব্যাপকভাবে রিপাবলিকানকে ভোট দিয়েছিলেন ২০০০ সালে। সেবার জর্জ ডব্লিউ বুশ এই সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছিলেন।

পরিস্থিতিটা বদলে যায় ৯/১১-এর হামলার পর। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কিছু রক্ষণশীল মুসলিম সাংস্কৃতিক ইস্যুতে রিপাবলিকান দলের দিকে আবার ঝুঁকতে শুরু করেছেন।

লুকমান বলেন, গাজা নিয়ে ক্ষোভ দক্ষিণপন্থার দিকে এই রদবদলকে সংহত করেছে।

তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের কফিনে সত্যিই পেরেক পুঁতে দিয়েছে।”




স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী রাখবেন

আজকের প্রযুক্তির উন্নতিতে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবে স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়, যার ফলে তার আয়ু কমে যেতে পারে। কিন্তু কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে স্মার্টফোনের ব্যাটারি অনেক সময় ভালো রাখা যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখা সম্ভব:

১. স্ক্রীন ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন
স্ক্রীনের উজ্জ্বলতা বাড়ানো ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়ার একটি প্রধান কারণ। যদি স্ক্রীনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা যায়, তবে ব্যাটারি অনেক সময় পর্যন্ত চলতে পারে।

২. শতভাগ চার্জ না করুন
স্মার্টফোনের ব্যাটারি লিথিয়াম আয়ন দিয়ে তৈরি হওয়ায়, অতিরিক্ত চার্জ বা পুরোপুরি চার্জ করলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সর্বোত্তম চার্জিং লেভেল হলো ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ। তাই, ফোনের ব্যাটারি কখনো শতভাগ চার্জ না করাই ভালো।

৩. ফোনের ভাইব্রেশন বন্ধ রাখুন
ভাইব্রেশন রিংটোনের তুলনায় বেশি শক্তি খরচ করে। তাই, যতটা সম্ভব ফোনের ভাইব্রেশন বন্ধ রেখে রিংটোন ব্যবহার করুন।

৪. বালিশের নিচে ফোন চার্জ করবেন না
বালিশের নিচে ফোন চার্জ করলে ফোন গরম হয়ে যায়, যা ব্যাটারির ক্ষতির কারণ হতে পারে। খোলামেলা জায়গায় ফোন চার্জ দেওয়া উচিত।

৫. ব্রাইটনেস অটোমেটিক রাখুন
আধুনিক স্মার্টফোনে অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর থাকে, যা আশপাশের আলো অনুযায়ী স্ক্রীনের উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য করে। এটি ব্যাটারির ব্যবহার কমিয়ে রাখে।

৬. পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার করুন
পাওয়ার সেভিং মোড স্মার্টফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপস বন্ধ করে, স্ক্রীনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে এবং সিপিইউ কর্মক্ষমতা হ্রাস করে ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করে।

৭. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ রাখুন
অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে এবং বেশিরভাগ ব্যাটারি খরচ করে। এই অ্যাপগুলো বন্ধ রাখুন, যা ব্যাটারি সাশ্রয়ী করতে সাহায্য করবে।

৮. ডার্ক মোড ব্যবহার করুন
ডার্ক মোড ব্যাটারি অপচয় কমিয়ে দেয়, কারণ এতে স্ক্রীনে কম শক্তি লাগে। তাই, ডার্ক মোডে ফোন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

 

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম




সাকিব আল হাসানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

পুঁজিবাজারে কারসাজি ও আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এই ক্রিকেটার ও তার স্ত্রীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জানা গেছে এরপর তদন্ত শেষে সম্প্রতি সরকারের নির্দেশে তার সকল ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানিয়েছেন: সাকিব আল হাসানের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

এমন সিদ্ধান্তে সাকিবের অচিরেই দেশে ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হলো। এই মুহূর্তে তিনি পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ পর্যন্ত তার না খেলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর মাঠে নামা হয় কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ইতোমধ্যে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নির্বাচনি আসন মাগুরা-১ থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে ভোটে লড়েন সাকিব। সেই নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্যও হন তিনি। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। এতে সংসদ সদস্য পদ হারান সাকিব। এরপর থেকেই দেশের বাইরে আছেন তিনি।

এর মধ্যে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন সাকিব। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে অবসরে যেতে চেয়েছিলেন। তবে তার সে ইচ্ছে আর পূরণ হয়নি।




বলিরেখা কমাতে ডিমের কার্যকর ব্যবহার

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: বয়সের ছাপ কমাতে ও ত্বককে টানটান রাখতে অনেকেই খোঁজ করেন সহজ ও ঘরোয়া উপায়। বলিরেখা দূর করতে ডিমের প্যাক ব্যবহার একটি জনপ্রিয় সমাধান। ডিমে থাকা প্রোটিন ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে মসৃণ ও টানটান করে তোলে। নিয়মিত ডিমের প্যাক ব্যবহার ত্বকের ছিদ্র সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে কয়েকটি কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো যেগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে এনে দিতে পারে সতেজতা ও কোমলতা।

১. মধু, লেবু, অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা, দই ও হলুদের মিশ্রণ: একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু, ১ চা চামচ লেবুর রস, আধা চা চামচ অলিভ অয়েল, আধা চা চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চা চামচ দই এবং আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২. ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক: ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ত্বকে পাতলা করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ত্বক টানটান হয়ে যাবে, এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. গাজরের রস ও ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে গাজরের রস মেশান এবং ত্বকে পাতলা করে লাগান। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করলে বলিরেখা কমবে।

৪. লেবুর রস ও ডিমের সাদা অংশের প্যাক: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে তাতে অর্ধেকটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. জয়ফল ও ডিমের সাদা অংশের ফেসপ্যাক: ডিমের সাদা অংশে সামান্য জয়ফল গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে টিস্যু দিয়ে টেনে তুলে ফেলুন এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

৬. দই ও ডিমের ফেসপ্যাক: একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করলে বলিরেখা কমে যাবে এবং ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

৭. মুলতানি মাটি ও ডিমের সাদা অংশ: এক চা চামচ মুলতানি মাটি ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। ২০ মিনিট রেখে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।




জেলায় জেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কমিটি গঠন শুরু

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: দেশব্যাপী জেলা কমিটি গঠন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এ জন্য ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে তারা। কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকেরা একটি পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে নাগরিক কমিটির সঙ্গে কাজ করতে l
প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলন, সেই আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবি। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার প্রধান দেশত্যাগ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন দেশের ছাত্র-জনতা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস ১১ দিন পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করে দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্যসচিব করে ৫৫ সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর আবদুল্লাহকে আহ্বায়ক এবং আরেক সমন্বয়কারী আরিফ সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কেন্দ্রীয় কমিটি গত শনিবার জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছে। কুষ্টিয়া জেলায় ১১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতেও কমিটি গঠন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এমন অবস্থার মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা কোন পথে যাচ্ছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি জাতীয় প্ল্যাটফরম হিসেবে থাকবে। যদি কেউ কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চায় তবে তিনি এই প্ল্যাটফরমের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। আর জেলায় জেলায় কমিটি গঠন করছি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করতে। সকলকে নিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতেই জেলায় জেলায় কমিটি দেওয়া হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন। এসব জেলায় ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে সভা হয়। প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সভায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজেদের নানা প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত জেলা পর্যায়ের মতবিনিময় সভাগুলোয়। এসব দাবি ও প্রস্তাব এক জায়গায় এনে এখন একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। এর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবেন।




আমু হয়ে উঠেছিলেন গডফাদার, ‘বিশেষ চাপ’ দিয়ে করতেন জমি দখল

বরিশাল অফিস :: বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও মুখপাত্র। জাতীয় নেতা হলেও তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি সবচেয়ে বেশি ছিল ঝালকাঠিতে। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল জেলায়, যারা আমুর হয়ে জেলার সব ধরনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ–বাণিজ্য, কমিটি গঠন, নির্বাচনী মনোনয়ন বিক্রি করত। এই চক্রের মাধ্যমে আমু হয়ে উঠেছিলেন ঝালকাঠির গডফাদার।

১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ (মালেক) থেকে। এর পরের যত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিয়েছিল, সব কটিতেই দলের প্রার্থী ছিলেন তিনি। ২০০০ সালের উপনির্বাচনে ঝালকাঠি-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালে দায়িত্ব পান শিল্পমন্ত্রীর। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হন আমু।

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহাদাৎ হোসেন বলেন, গত ১৬ বছর সব সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন আমির হোসেন আমু। নৈশপ্রহরী থেকে শুরু করে সব চাকরিতে আমুকে টাকা দিতে হতো। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এরপর আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে ওই বাড়ি থেকে পোড়া-অক্ষত মিলিয়ে প্রায় চার কোটি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এর আগেই আমু পালিয়ে যান। এর পর থেকে আমুর অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। তাঁর নামে একাধিক মামলা হয়েছে। ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশনায় তাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তাঁর পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল জেলায়, যারা আমুর হয়ে জেলার সব ধরনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ–বাণিজ্য, কমিটি গঠন, নির্বাচনী মনোনয়ন বিক্রি করত। এই চক্রের মাধ্যমে আমু হয়ে উঠেছিলেন ঝালকাঠির গডফাদার।

ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখল করে আমির হোসেন আমু নিজের মা-বাবার নামে আকলিমা মোয়াজ্জেম হোসেন ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রায় ছয় একর জমি জোর করে নামমাত্র মূল্যে লিখে নেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, আমু নিজেই পুলিশের ভয় দেখিয়ে লোক দিয়ে জমি দখল করেন।

কলেজের পাশে ঝালকাঠি শহরের লবণ ব্যবসায়ী ফজলুল হক হাওলাদারের ৩৬ শতক জমি ছিল। তাঁর জামাতা প্রবাসী আতিকুর রহমানের আরও ৭৫ শতাংশ জমি নিয়ে ফজলুল হক যৌথভাবে হাওলাদার ফিলিং স্টেশন নামে একটি পাম্প নির্মাণ শুরু করেন। স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে ৩৬ লাখ টাকা খরচ করেন। কিন্তু আমু তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজের জন্য সেই জমি লিখে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। ফজলুল হক অস্বীকৃতি জানানোয় আমুর ‘খলিফা’ জিএস জাকিরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা প্রায়ই তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে জমি লিখে দিতে হুমকি দিয়ে আসতেন। একদল পুলিশ প্রায়ই তাঁর ছেলে রিয়াজুল ইসলামকে তুলে নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থানায় বসিয়ে রাখত। ভয় দেখাত ‘ক্রসফায়ারের’।

ফজলুল হক বলেন, ‘একদিন আমুর বরিশালের বগুড়া রোডের বাসায় আমাকে ও আমার জামাতাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বসে তিনি বলেন, “আমার নামে জমি লিখে না দিলে তোমাদের পরিণাম হবে ভয়াবহ।” পরে ভয়ে আমি ও আমার জামাতা তাঁর বাসায় বসে জমি লিখে দিই। সেদিন রাত ১২টার দিকে ঝালকাঠি সদর সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাঁর বাসায় বসে জমি রেজিস্ট্রি হয়। আমাকে কাঠাপ্রতি তিন লাখ টাকা নামমাত্র মূল্য দেওয়া হয়। অথচ এ জমির প্রতি কাঠার মূল্য ১০ লাখ টাকা। জমি লিখিয়ে নেওয়ার জন্য একজন দলিল লেখক সব সময় প্রস্তুত থাকতেন। এ কাজে সহায়তা করতেন জিএস জাকির ও পিপি আবদুল মান্নান রসুল।’

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছিল জেলায়, যারা আমুর হয়ে জেলার সব ধরনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ–বাণিজ্য, কমিটি গঠন, নির্বাচনী মনোনয়ন বিক্রি করত। এই চক্রের মাধ্যমে আমু হয়ে উঠেছিলেন ঝালকাঠির গডফাদার।

ব্যবসায়ী ফজলুল হক আরও বলেন, ‘আমার ব্যবসায়ী অংশীদার সালেক শরীফের সঙ্গে একটি লবণের মিল নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সেই মিলে আমি প্রায় ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। কিন্তু সালেক শরীফের ছেলে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল শরীফ (এক ‘খলিফা’) আমাকে মিলের অংশ দিতে অস্বীকার করেন। পরে সব তথ্যপ্রমাণ দেখানো সত্ত্বেও মীমাংসার নামে আমু পুরো মিলের মালিকানা সালেক শরীফকে দিয়ে দেন। আমার পক্ষে কথা বলবেন বলে আমু আমার কাছ থেকে নগদ পাঁচ লাখ টাকা নেন। সেই টাকাও আজ পর্যন্ত ফেরত পাইনি।’

আওয়ামী গডফাদার তাহেরের ‘সাম্রাজ্যে’র নতুন অধিপতি ছিলেন ছেলে টিপু
খলিলুর রহমান নামে অপর এক জমির মালিক বলেন, ‘আমার অনেক কষ্টে জমানো টাকায় ৬ শতক জমিতে একটি পাকা টিনশেড ঘর তৈরি করি। সেই জমি লিখে নিতে জাকির চাপ সৃষ্টি করেন। পরে আমার বাড়ির প্রবেশপথ কলেজের সীমানাপ্রাচীর দিয়ে আটকে দেন আমু। কিছুদিন আমি ও আমার স্ত্রী মই দিয়ে প্রাচীর টপকে বাড়িতে প্রবেশ করতাম। আমুর ঢাকার বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রী কিছুদিন গৃহকর্মীর কাজ করেছে, যাতে জমিটি লিখে দিতে না হয়। কিন্তু আমুর মন গলেনি। একপর্যায়ে মাত্র আট লাখ টাকার বিনিময়ে বাড়িসহ ছয় শতক জমি লিখে দিতে বাধ্য হই।

একইভাবে আমু তাঁর প্রতিষ্ঠিত কলেজের জন্য আবদুর রাজ্জাক, পাদুকা ব্যবসায়ী সম্রাট শু হাউসের মালিক পরিমল চন্দ্র দে, সাবিহা কেমিক্যাল ওয়ার্কসের মালিক মো. সামসুল হক ও তাঁর ভাই-বোনদের ৩৬ শতকসহ অনেকের জমি দখল করে নেন। এসব জমি ভরাটের জন্য জেলা পরিষদ থেকে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়।

আমুর ঢাকার বাসায় গিয়ে আমার স্ত্রী কিছুদিন গৃহকর্মীর কাজ করেছে, যাতে জমিটি লিখে দিতে না হয়। কিন্তু আমুর মন গলেনি। একপর্যায়ে মাত্র আট লাখ টাকার বিনিময়ে বাড়িসহ ছয় শতক জমি লিখে দিতে বাধ্য হই
খলিলুর রহমান।

২০১৫ সালে আমুর নির্দেশে জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল ভবনের দুটি কক্ষ ও সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের লোকজন। কালেক্টরেট স্কুলের পাশেই আমুর স্ত্রীর নামে বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য এ ভাঙচুর চালানো হয়। ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সুগন্ধা নদীর তীরে কালেক্টরেট স্কুলটি নির্মাণ করা হয়।

বিদ্যালয়টির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য জেলা প্রশাসন সামনেই একটি পুকুর ও চারপাশে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে। কালেক্টরেট স্কুলটির পাশেই নির্মাণ করার কথা ছিল বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভবন। পরে সেখানে আর সেই প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়নি, যদিও জমি দখলে রয়েছে। পরে ওই জমির পেছনে ২০২৩ সালে বেগম ফিরোজা আমু হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়।

জানতে চাইলে বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য যে জমির প্রয়োজন, সমঝোতার মাধ্যমে একটু জমি নিয়েছি। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

কালেক্টরেট স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ‘আমি এ জেলায় নতুন যোগ দিয়েছি। বিদ্যালয়ের জমি অবৈধভাবে ব্যবহার করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঝালকাঠিতে উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ মানেই আমুকে কমিশন দিতে হতো। এ কাজে নিজের একটি বাহিনী তৈরি করেছিলেন তিনি। আমুর হয়ে বেশির ভাগ কাজ করতেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান সুরুজ ওরফে রাঙ্গা ভাই, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আল মাহমুদ, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির ওরফে জিএস জাকির এবং জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল শরীফ।

স্থানীয়ভাবে তাঁরা ‘চার খলিফা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আমুর ভায়রা ও এপিএস ফখরুল মজিদ কিরণ, ঢাকার বাসার আমুর ব্যক্তিগত সহকারী শাওন খানকেও কিছু ভাগ দিতে হতো। আমুর নামে তাঁরা ৩০-৪০ শতাংশ কমিশন নিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছে দরপত্র বিক্রি করে দিতেন।

এলজিইডির অন্তত তিনটি সূত্রে জানা গেছে, ‘চার খলিফা’র নেতৃত্বে ঢাকার এলজিইডি ও সওজ অধিদপ্তরসহ মন্ত্রণালয় থেকে অপ্রয়োজনীয় কালভার্ট ও সেতুর প্রকল্প তৈরি করে নিয়ে আসা হতো। অনেক সময় ভালো সেতু ভেঙেও নতুন সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ আনা হতো। আমুর আধা সরকারি চিঠির (ডিও লেটার) মাধ্যমে নেওয়া এসব কাজে অতিরিক্ত বরাদ্দ ধরা থাকত। পরে এসব কাজ প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশনে বিক্রি করে দেওয়া হলেও ঠিকাদারের লাভ থাকত।

ঝালকাঠি সওজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঠিকাদার নির্বাচনে আমুর সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পর দরপত্র (গুচ্ছ) নেওয়া গেলেও জমা দিতে দরপত্রের কাগজ তুলে দিতে হতো চার খলিফার হাতে। কথা না শুনলে সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল বদলি নয়, হেনস্তা করা হতো। সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, জেলার চার উপজেলা প্রকৌশলী, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই নিয়ম।

ঝালকাঠি এলজিইডির ঠিকাদার মেসার্স মনোয়ারা এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে এলজিইডিতে কাজ করছি। লটারির মাধ্যমে কয়েকটি কাজ পেয়েও আমুকে ৫ পার্সেন্ট হারে কমিশন দিতে হতো। টাকা না দিলে কাজ করা সম্ভব হতো না। আমার কাছ থেকে ৬৮ লাখ ও ৩৩ লাখ টাকার দুটি কাজের বিপরীতে প্রায় ৪ লাখ টাকা কমিশন নেওয়া হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম তালুকদার ওরফে মনির হুজুর ছিলেন আমুর বিশ্বস্ত সহচর। মনিরুলের বাবা লিয়াকত আলী তালুকদার ছিলেন পৌরসভার মেয়র। পৌরসভার সব ঠিকাদারির কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন মনিরুল। তিনি প্রতিটি ঠিকাদারি কাজ শুরু করার আগেই আমুর কমিশনের ভাগ হিসাব করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতেন। তাঁর পরিবার কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

দলীয় মনোনয়ন ও কমিটি নিয়ন্ত্রণ
নিজের আসন ঝালকাঠি-২ তো বটেই, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের রাজনীতিতেও আমুর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটিতে তাঁর মনোনীত ব্যক্তিরা স্থান পেয়ে এসেছেন। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিএনপিপন্থী ব্যক্তিদের বড় পদে বসানোর অভিযোগ রয়েছে। সাবেক বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী তালুকদারকে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে, ২০০৪ সালে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মাহাবুব হোসেনকে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে এবং সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বসান আমু।

পদবঞ্চিত অন্তত পাঁচ নেতা বলেন, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো সরদার মো. শাহ আলম সভাপতি ও খান সাইফুল্লাহ সাধারণ সম্পাদক হন। সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ৪টি উপজেলা, ২টি পৌরসভাসহ ৩২টি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে একমাত্র আমুর মনোনীত নেতারাই স্থান পেয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস করতেন না। কারণ, সামান্য প্রতিবাদেও শেষ হয়ে যেত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। আমুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের একসময়ের দাপুটে দুই নেতা সাবেক মেয়র আফজাল হোসেন ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান দল থেকে ছিটকে পড়েন। আমুর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে পৌরসভায় আফজাল হোসেন এবং উপজেলা পরিষদে সুলতান হোসেন নির্বাচন করে পরাজিত হন।

নগদ টাকা ছাড়া নিতেন না :
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সব টাকাই নগদে দিতে হতো আমুকে। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন তাঁর ভায়রা কিরণ। কিরণের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হ‌ুমায়ূনের ছোট ভাই কিরণ তাঁর নিজের এলাকা বাদ দিয়ে পড়ে থাকতেন ঝালকাঠিতে। কেবল কমিশন আদায় নয়, নির্বাচনী এলাকায় আমুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তিনি। নলছিটি উপজেলার আওয়ামী লীগের এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো কিরণের। নলছিটির সব কাজের ভাগ-বাঁটোয়ারা করতেন তিনি।

ঝালকাঠির রোনালস রোডের বাড়ি, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের আলিশান বাংলোবাড়ি ও ঢাকার ইস্কাটনে বাংলোবাড়ি রয়েছে আমুর।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ব্যাংকে টাকা না রেখে আমু বাড়িতেই রাখতেন। যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট। আমুর ঝালকাঠির বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে আগুন নেভানোর সময় কয়েকটি পোড়া লাগেজ থেকে টাকার বান্ডিল বেরিয়ে পড়ে। তখন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা এসে ওই টাকার লাগেজগুলো উদ্ধার করেন। এর মধ্য থেকে তাঁরা গণনা করে একটি লাগেজে অক্ষত ১ কোটি এবং অপর লাগেজগুলো থেকে গণনা করে আংশিক পোড়া ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা উদ্ধার করেন। এ ছাড়া সেখানে ডলার, ইউরোসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যমানের মুদ্রা ছিল বলে জানায় পুলিশ।

ঝালকাঠির রোনালস রোডের বাড়ি, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোডের আলিশান বাংলোবাড়ি ও ঢাকার ইস্কাটনে বাংলোবাড়ি রয়েছে আমুর। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ব্যাংকে টাকা না রেখে আমু বাড়িতেই রাখতেন। যার প্রমাণ মেলে ৫ আগস্ট।
নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ, মামলা, হয়রানি
প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তার করতেন আমু। ঝালকাঠিতে ‘এক ভোটের চেয়ারম্যান’ বলে একটি কথার প্রচলন রয়েছে। এর মানে হলো নির্বাচনে জিততে একজন প্রার্থীকে কেবল আমুর ভোট পেতে হতো। আমুকে টাকা দিয়ে যিনিই নৌকার মনোনয়ন পেতেন, তিনি নিশ্চিত বিজয়ী হতেন। নির্বাচনের মৌসুম এলেই ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের যাতায়াত বেড়ে যেত।

অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সম্পদ বিবরণীতে যে তথ্য আছে, তা তাঁর প্রকৃত সম্পদের সামান্য অংশ।

ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল মান্নান রসুল আমুর প্রভাব বিস্তার করে জেলা আইনজীবী সমিতিতে টানা ১১ বছর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান জানান, আমুর নির্দেশে আবদুল মান্নান রসুল বিএনপি ও ভিন্নমতের নেতা–কর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে ফাঁসাতেন। আমুর পরেই তিনি ছিলেন ঝালকাঠির অঘোষিত সম্রাট। সরকারি মামলায় টাকা না দিলে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করতেন তিনি। সাধারণ আইনজীবীরা তাঁর ভয়ে তটস্থ থাকতেন। জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডশিয়াল আদালতে গত ১৬ বছরে সব ধরনের নিয়োগ–বাণিজ্যে আমির হোসেন আমুর নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আবদুল মান্নান রসুলের বিরুদ্ধে।

২০২৪ সালের হলফনামায় দেখা যায়, আমুর কৃষিজমি, বাড়ি, দোকান, চাকরি ও অন্যান্য উৎস থেকে বার্ষিক আয় ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ও স্থায়ী আমানত ২৩ লাখ ৭০ হাজার ২৩৫ টাকা।

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আমুর নগদ অর্থের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ টাকা। ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর নগদ অর্থ বেড়ে হয় দুই কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা দেখানো হয় আট কোটি টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আমুর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ওই সময়ে তাঁর আবাসিক ভবন ছিল দুটি, যার মূল্য ছিল ৯৪ লাখ টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ছিল ১২টি। ২০২৪ সালের হলফনামায় দেখা যায়, আমুর কৃষিজমি, বাড়ি, দোকান, চাকরি ও অন্যান্য উৎস থেকে বার্ষিক আয় ৬০ লাখ ৩০ হাজার ৬০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, শেয়ার ও স্থায়ী আমানত ২৩ লাখ ৭০ হাজার ২৩৫ টাকা। তাঁর বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া আসবাবসহ অন্যান্য খাতে আরও ১৩ কোটি ৪৯ লাখ ৩ হাজার ৮৩৮ টাকার সম্পদ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। তাঁর আবাসিক ভবন রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটির মূল্য ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বাকি দুটির মূল্য অজানা লেখা হয়েছে।

ঝালকাঠি সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন, হলফনামার বিবরণীতে আমুর সম্পদ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সম্পদ বিবরণীতে যে তথ্য আছে, তা তাঁর প্রকৃত সম্পদের সামান্য অংশ।




দেশের মানুষ সাফল্য চায়, তোমরা তা এনে দিয়েছ: প্রধান উপদেষ্টা

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ  :: সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছ।

শনিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেওয়া শেষে তিনি একথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে বিজয় অর্জনকারী এই দলটি তাদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শেয়ার করেন।

এসময় নারী ফুটবলারদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সাফল্যের জন্য আমি পুরো জাতির পক্ষ থেকে তোমাদেরকে অভিনন্দন জানাই। জাতি তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আর তোমরা সেই সাফল্য এনে দিয়েছ।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।

তিনি বলেন, অনেক বাধা পেরিয়ে আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীদের সামগ্রিকভাবে নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করা সাবিনা তার আগের প্রজন্মের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আগের প্রজন্ম ফুটবলকে তাদের ভালবাসা হিসেবে বেছে নেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন।

সাবিনা বলেন, আমাদের অনেকে সাধারণ পরিবার থেকে এসেছে এবং তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে হয়। তিনি বলেন, আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। এই বেতন দিয়ে পরিবারকে তেমন কোন সাহায্য করতে পারি না।

এই তারকা স্ট্রাইকার তার কয়েকজন সহযোদ্ধার সংগ্রামের গল্প, যেমন মারিয়া মান্দারের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

উইঙ্গার কৃষ্ণা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেন যেন তাদের জন্য এশিয়ার বাইরে একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়, বিশেষ করে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম ও তাদের বিভিন্ন দাবি আলাদাভাবে কাগজে লিখে তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলেন।

অধ্যাপক ইউনুস বলেন, তোমরা যা কিছু চাও তা লিখতে দ্বিধা করো না আমরা তোমাদের দাবিগুলো পূরণ করার চেষ্টা করব। যদি কিছু এখনই করা সম্ভব হয়, আমরা তা করব।




রাতের অন্ধকারে ছবি-ভিডিও তুলতে সক্ষম ড্রোন তৈরি করল ইরানি বিজ্ঞানীরা

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ঐ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজাভি বলেছেন, নিরাপত্তাগত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমদানিকৃত ড্রোনগুলোর ওপর নির্ভরতা থেকে সরে আসার জন্য একদল গবেষক কাজ করেছেন। তারা রাতের অন্ধকারে ছবি ও ভিডিও ধারণে সক্ষম ড্রোন তৈরি করেছেন। এই ড্রোন দিয়ে রাতেও লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজর রাখা সম্ভব।

কোম্পানির প্রধান কাজাভি আরও বলেছেন, এসব ড্রোনে ইনফ্রারেড এবং থার্মাল ক্যামেরা বসানোর সব ব্যবস্থা রয়েছে এবং এসব ক্যামেরার সাহায্যে লক্ষ্যবস্তুকে ১৮০ গুণ পর্যন্ত বড় করে ছবি তোলা সম্ভব।

এই প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমানে ৪০ মিনিট পর্যন্ত আকাশে ওড়ার সক্ষমতা রয়েছে। পরবর্তীতে তা বাড়ানো সম্ভব। ড্নটি বাণিজ্যিকীকরণ পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।#




টিভিতে আজকের খেলা

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিন আজ। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে আছে একাধিক বড় দলের ম্যাচ।

মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগ
ব্রিসবেন হিট–হোবার্ট হারিকেন্স
সকাল ৬–৩০ মিনিট , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

মেলবোর্ন রেনেগেডস–পার্থ স্করচার্স
সকাল ১০টা , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

হংকং ক্রিকেট সিক্সেস

অস্ট্রেলিয়া–নেপাল
সকাল ৬–৩০ মিনিট , স্টার স্পোর্টস ১

ভারত–সংযুক্ত আরব আমিরাত
সকাল ৭–২৫ মিনিট , স্টার স্পোর্টস ১

মুম্বাই টেস্ট–২য় দিন
ভারত–নিউজিল্যান্ড
সকাল ১০টা , স্পোর্টস ১৮-১ ও টি স্পোর্টস

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
নিউক্যাসল–আর্সেনাল
সন্ধ্যা ৬–৩০ মিনিট , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

বোর্নমাউথ–ম্যানচেস্টার সিটি
রাত ৯টা , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

লিভারপুল-ব্রাইটন
রাত ৯টা , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ২

উলভারহ্যাম্পটন–ক্রিস্টাল প্যালেস
রাত ১১–৩০ মিনিট , স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

টেনিস: প্যারিস মাস্টার্স
সেমিফাইনাল
সন্ধ্যা ৭টা , সনি স্পোর্টস টেন ৫

জার্মান বুন্দেসলিগা
বায়ার্ন মিউনিখ–ইউনিয়ন বার্লিন
রাত ৮–৩০ মিনিট , সনি স্পোর্টস টেন ২

বরুসিয়া ডর্টমুন্ড–লাইপজিগ
রাত ১১–৩০ মিনিট , সনি স্পোর্টস টেন ২

সৌদি প্রো লিগ
আল ইত্তিফাক–আল কাদিসিয়া
রাত ১২টা , সনি স্পোর্টস টেন ২




সরকারি বরাদ্দে খাল ভরাট করে বাজার

বরিশাল অফিস :: খালটি দিয়ে একসময় নৌকা চলত। জোয়ার-ভাটার পানি আসত। নিষ্কাশন হতো জমে থাকা বৃষ্টির পানি। চলত সেচকাজ। পৌর কর্তৃপক্ষ সেই খাল ভরাট করে বাজার বসিয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন যে যার মতো দখল করে দোকান তৈরি করেছে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে খালটি।

এ চিত্র বরগুনার বেতাগী পৌরসভার টাউনব্রিজ এলাকার বেতাগী খালের। পাইলিং দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে খালটির। বাজার বসিয়ে ইজারা দিয়ে রীতিমতো খাজনা আদায় করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ এলাকায় কাঁচাবাজার, দুধ বিক্রি ও চায়ের দোকানিদের বসার কোনো জায়গা নেই। সেতু ও রাস্তার ওপর পণ্য বিক্রি করা হয়। এতে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হয়। তাদের কথা চিন্তা করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে কাবিটা, টিআর ও উন্নয়ন খাতের অর্থ দিয়ে খালটি ভরাট করে বাজার বসানো হয়েছে।

এতে বছরে ১০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় বেড়েছে। আক্ষেপ করে বরগুনা পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসান ঝন্টু বলেন, সাময়িক লাভের আশায় পরিবেশের এত বড় ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি কোন কোন প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। খাল রক্ষায় আইনের শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

বিষখালী নদীর মোহনা থেকে বেতাগী মৌজায় ৭ হাজার মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩৫ মিটার প্রস্থের খালটি বেতাগী সদর ও হোসনাবাদ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। এ খাল ব্যবহার করে একসময় নৌকায় করে সরকারি খাদ্যগুদাম ও বেতাগী বন্দরের ব্যবসায়ীদের মালপত্র পরিবহন হতো। কয়েক বছর ধরে খালটি দখল ও ভরাট করছে স্থানীয় লোকজন। গত বছর এ কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

এতে খাল দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া খাল ভরাটের কারণে পানি সরবরাহ, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ পরিবেশবিদরা।

মৎস্য অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, খাল সংকুচিত হওয়ায় অভয়াশ্রম থেকে মাছসহ জলজ প্রাণী অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন কাজে খালটি অস্তিত্ব হারানোর উপক্রম হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমদ বলেন, খাল ভরাট হয়ে গেলে কৃষকের সেচ সুবিধা সংকুচিত হবে। ফসল আবাদে খরচ বেড়ে যাবে। এতে তাদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পাশাপাশি খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের জেলে আফজাল হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মাছ ধরে খাই। খাল ভরাট হয়ে গেলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে খালটি স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে দখল করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বাধা দেওয়া হয়নি। খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ কীভাবে খালটি ভরাট করল বোধগম্য নয়।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দীন বলেন, সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর খালে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে পৌর প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সে অনুযায়ী কাজ করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী ভূমি কমিশনার ফারুক আহমদ বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া খাল ভরাটের এখতিয়ার ভূমি অফিস বা পৌর কর্তৃপক্ষের নেই। আমি এখানে যোগদানের আগেই এ কাজ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে খালের ভরাট অংশ উচ্ছেদেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, খালটি ভূমি অফিসের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। আমাদের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ভরাটে বাধা দেওয়া হয়নি।