কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে করণীয়

শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এটি শিরায় জমা হয়ে ধমনীর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিচে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু উপায় তুলে ধরা হলো।

ফাইবারযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়ান

খাবারের তালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করুন। বার্লি, তুষ, গোটা গমের আটা, শণের বীজ, বাদাম, পেস্তা, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করুন। মটরশুটি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ওটমিল, আপেল, ও নাশপাতির মতো ফল-মূল কোলেস্টেরলের শোষণ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত এসব খাবার গ্রহণ করলে শরীর থাকবে সুস্থ।

ধূমপান ত্যাগ করুন

ধূমপান শুধুই ক্ষতিকর অভ্যাস নয়, এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপান বন্ধ করলে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে। হৃদরোগ, ফুসফুস ক্যান্সার, বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ধূমপান পরিহার করুন।

প্রোটিন ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর। মুরগির মাংস, ডিমের সাদা অংশ, আখরোট, বাদাম এবং সামুদ্রিক মাছ খেলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় এই উপাদানগুলো যোগ করলে সুস্থ থাকা অনেক সহজ হয়ে ওঠে।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম

প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝেও অন্তত ৩০ মিনিটের ব্যায়াম করুন। এটি কোলেস্টেরল কমাতে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। হাঁটাহাঁটি, জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটার মতো কার্যক্রম শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।

অপ্রয়োজনীয় চর্বি পরিহার

খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের অভ্যাস বদলাতে হবে। বিশেষত প্রসেসড ফুড এবং অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

নিজের যত্ন নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমেই আপনি সুস্থ থাকতে পারেন।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম



ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকরী সবজি বেগুন: চিকিৎসকের পরামর্শ

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন কিছু সবজি রয়েছে যা সুস্থ থাকতে সাহায্য করে এবং নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি কমাতে কিছু খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিকিৎসকদের মতে, এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ সবজি হলো বেগুন। এই সবজি নিয়মিত খেলে কেবলমাত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেই সহায়তা করে না, পাশাপাশি এটি ক্যানসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে একাধিক চিকিৎসক এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বেগুনের উপকারিতা
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি করলে শরীরে নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের প্রভাবে চোখ, কিডনি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলেন, বেগুনের মধ্যে থাকা ফাইবার সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং বেগুনে উপস্থিত গ্লুকোজ রক্তে দ্রুত মিশতে দেয় না, যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। এছাড়া বেগুনে পলিফেনলস নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সহায়তা করে। এ কারণেই ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বেগুন রাখতে বলেন চিকিৎসকরা।

ক্যানসার প্রতিরোধে বেগুনের ভূমিকা
বর্তমানে ক্যানসারজনিত রোগের প্রকোপ ক্রমশই বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অনুপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্যানসার একটি জটিল রোগ এবং এর চিকিৎসা প্রক্রিয়াও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তবে ক্যানসার প্রতিরোধে বেগুন বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, বেগুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। বেগুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমায় এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বিকাশে বাধা দেয়। তাই ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় বেগুন রাখা উপকারী হতে পারে।

হার্টের যত্নে বেগুনের উপকারিতা
হার্টের সুস্থতা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেগুন হার্টের জন্যও উপকারী হিসেবে প্রমাণিত। বেগুনে ফাইবার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে শরীরে ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটি হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

ওজন নিয়ন্ত্রণে বেগুন
ওজন বাড়লেই শরীরে নানা জটিল সমস্যা দেখা দেয়, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি। অতিরিক্ত ওজনের কারণে এসব রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে খাদ্যতালিকায় বেগুন যুক্ত করা উপকারী হতে পারে। বেগুনে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়। এ কারণে সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। যারা ওজন কমাতে চান, তারা নিয়মিত বেগুন খেলে উপকৃত হবেন।

স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও কিছু পরামর্শ
চিকিৎসকরা বলেন, শুধুমাত্র বেগুনের উপর নির্ভর করে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে সুষম খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট জিমে বা ঘরে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং রেড মিটের পরিবর্তে মাছ ও সবজি খেতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকাও স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।




প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি হার্টের জন্য উপকারী?

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ডিম, প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর খাবার, যুগ যুগ ধরে মানুষের খাদ্য তালিকার একটি অপরিহার্য অংশ। মুরগির ডিম সবচেয়ে পরিচিত হলেও, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ডিমের নানা জাত পাওয়া যায়। এটি সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ।

অতীতে ডিমের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, পরিমিত ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর হতে পারে। ডিমে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে রান্না করা ডিম স্বাস্থ্যকর হতে পারে এবং এটি শরীরের টিস্যু বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ডিমের প্রোটিন পেশী তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর। এতে ভিটামিন এ, বি ১২ এবং সেলেনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ডিমের কোলিন হৃদরোগের জন্য ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

ডিমের উপকারিতা

ডিমে থাকা ভিটামিন ও খনিজগুলি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সাহায্য করে, শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লুটেইন ও জেক্সানথিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং মাখনের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ডিমের প্রভাব

ডিম একটি কম-ক্যালোরি খাবার, তবে যারা হৃদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য ডিম খাওয়া সীমিত করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাদ্য পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

ঝুঁকির কারণ

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ডিম খাওয়া হৃদরোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডিমে থাকা উচ্চ কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট এসবের জন্য দায়ী। অধিক ডিম খাওয়া হজমের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ফোলাভাব, গ্যাস এবং বদহজম।