সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রবর্তিত এই সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বিশেষ করে এই আইনকে কালাকানুন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল বিভিন্ন মহলে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, আজকের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনি যাচাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

এছাড়া, সাইবারস্পেসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে, যা বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছিল, তবে এটি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে, এই আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করার পরেও কিছু বিতর্কিত ধারা নতুন আইনে রাখা হয়েছিল, যার ফলে সরকারের পক্ষ থেকে অপব্যবহার হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

২০২১ সালে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর এই আইনের বিরোধিতা তীব্র হয়ে ওঠে। আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও, এই আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০২৩ সালে এক গণমাধ্যমকর্মীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হলে, আইন বাতিলের দাবি আবারও শীর্ষে উঠে আসে।

পরবর্তীতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন’ রাখা হয়, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হয়। এই আইনে পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, এক সপ্তাহের মধ্যে এই আইন বাতিল করা হবে এবং এর অধীনে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোকেও বাতিল করা হবে। এছাড়া, মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা এমন সব আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম



বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব জাতিসংঘের

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বাংলাদেশে দুই দিনের সফরে আসেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভলকার তুর্ক জানান, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন।

ভলকার তুর্ক বলেন, “আজকের বৈঠকে আমরা বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছি। বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।” তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে জাতিসংঘের সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, এই সহযোগিতা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য কর্মকর্তারাও, যারা মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করেন এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভলকার তুর্কের সফরের শেষ দিন সেনাপ্রধান, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে, যা সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্ক আরও মজবুত করতে সহায়তা করবে।

এটি উল্লেখযোগ্য যে, বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার চ্যালেঞ্জের সমাধান এবং বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সুদৃঢ় কর্মসূচির পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর। ভলকার তুর্ক বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হোক এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে জাতিসংঘ।”

এই সফর থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সহযোগিতার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।