পটুয়াখালীতে দলবদ্ধ তরমুজ চাষে সফলতার গল্প: নবীন ও প্রবীণ কৃষকদের একত্রিত উদ্যোগ
পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নবীন ও প্রবীণ কৃষকদের দলবদ্ধ তরমুজ চাষ দারুণ সফলতার গল্প তৈরি করছে। জমির অভাবের কারণে অন্যের জমি লিজ নিয়ে উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করছেন তারা। চাষের এই পদ্ধতিতে দলবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা চাষাবাদের খরচ এবং লাভ-লোকসান ভাগ করে নিচ্ছেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতির ৩৩ কানি এলাকায় ১৮ একর জমিতে তরমুজের চাষ শুরু করেছেন পাঁচজনের একটি কৃষক দল। নবীন কৃষক সালাউদ্দিন জানান, “আমরা পাঁচজন মিলে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি কানি জমি ৩০ হাজার টাকায় পাঁচ মাসের জন্য লিজ নিয়েছি। দলবদ্ধভাবে চাষ করায় খরচ ভাগাভাগি হচ্ছে, যা একজন কৃষকের জন্য অনেক সুবিধাজনক।”
এবারের মৌসুমে তারা উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের তরমুজ চাষ করছেন। জমি তৈরির কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। ধান কাটার পরপরই জমিতে হাল চাষ ও বীজ বপন শুরু হয়। বীজ থেকে ইতোমধ্যেই দুই থেকে তিন পাতা গজিয়েছে। মৌসুমজুড়ে তারা ক্ষেতে অবস্থান করে চাষাবাদ ও পরিচর্যা করবেন।
প্রবীণ কৃষক মজিদ ও নিজাম বলেন, “প্রায় ১০ বছর ধরে আমরা দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছি। গত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষ করছি। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের খরচ কমে যায় এবং সবার জন্য লাভজনক হয়। এবারও আমরা আশা করছি, ভালো ফলন হবে।”
তারা আরও জানান, প্রতি কানি জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রায় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে একসঙ্গে বড় পরিসরে চাষ করার কারণে খরচ মেটানোর জন্য কারো ব্যক্তিগতভাবে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া, উৎপাদিত তরমুজ বাজারজাত করে পাইকারি দরে বিক্রি করেন তারা, যা তাদের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে সহায়তা করছে।
চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার এবং বীজ তাবুতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই তাবুতে মৌসুমের পুরো সময় ধরে কৃষক ও শ্রমিকরা অবস্থান করবেন। তরমুজের পরিচর্যা থেকে শুরু করে ফসল কাটার কাজ পর্যন্ত সব কিছু এখান থেকেই পরিচালিত হবে।
তবে দলবদ্ধ চাষাবাদের এই উদ্যোগে কৃষকদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো সমন্বয় নেই বলে জানান তারা। কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক বা কারিগরি সহযোগিতা পাননি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, “এ বছর তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে সরাসরি সহযোগিতার বিষয়টি আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
পটুয়াখালীর মতো উপকূলীয় অঞ্চলে তরমুজ চাষের সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তরমুজের চাষাবাদে অভিজ্ঞ এই কৃষকরা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে দলবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কীভাবে চাষাবাদের ব্যয় কমিয়ে লাভ বাড়ানো যায়। তাছাড়া, স্থানীয় যুবকদের মধ্যেও চাষাবাদে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
তাদের মতে, আরও ভালো প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এ অঞ্চলে তরমুজ উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে, যা স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।