গোপনে ব্রেইনের ক্ষতি করে যে অভ্যাস

আমরা প্রায়ই শারীরিক সুস্থতার দিকে মনোযোগী থাকলেও, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে গোপনে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। ফোনে অতিরিক্ত সময় কাটানো, প্রয়োজনীয় পুষ্টি না নেওয়া, এবং কিছু সহজ অভ্যাস যা স্বাভাবিক মনে হয়, তা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং সুস্থতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু অভ্যাস যেগুলো ব্রেইনের স্বাস্থ্যকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আসুন জেনে নিই সেগুলো সম্পর্কে।

ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার
আমাদের দিনকে ফোন ছাড়া কল্পনা করাও যেন অসম্ভব। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার আমাদের মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটি মনোযোগের মাত্রা কমিয়ে দেয়, মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে এবং ঘুমের গুণগত মানেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মানসিক স্বচ্ছতা কমে যায়। সময়-সুযোগে ফোন-মুক্ত সময় কাটানো এবং স্ক্রীন থেকে বিরতি নেওয়া মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
ভাজা খাবার, চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি আকর্ষণ মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। এ ধরনের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা ব্রেইনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে ব্রেইনকে সুস্থ রাখা সম্ভব। সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছসহ সঠিক খাবারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।

নতুন কিছু না শেখা
মস্তিষ্ক সব সময় নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ পায় এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যখন আমরা নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দিই, তখন মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়। মস্তিষ্কের সংযোগ শক্তিশালী রাখতে পড়াশোনা, নতুন ভাষা শেখা কিংবা মস্তিষ্কের গেমস খেলা প্রয়োজন। এটি মস্তিষ্কের ধার্মিকতা এবং তীক্ষ্ণতা বজায় রাখে।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা
শারীরিক কার্যকলাপ কেবল শরীরের জন্য নয়, এটি মস্তিষ্কের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগের জন্য উপকারী। দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই কিছুক্ষণ পরপর দাঁড়িয়ে হাঁটাহাঁটি বা ডেস্ক এক্সারসাইজ করা উচিত।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম



অতিরিক্ত প্রত্যাশা কমিয়ে হতাশা এড়ানোর পরামর্শ

প্রত্যাশা রাখা স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত প্রত্যাশা প্রায়ই হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যাশা কি এবং কিভাবে এটি মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট ডা. তানজিরা বিনতে আজাদ তাঁর পরামর্শ দিয়েছেন।

ডা. আজাদ বলেন, প্রত্যাশার ধারণা মূলত অন্যের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা প্রকাশ করে। তবে অতিরিক্ত প্রত্যাশা অনেকসময় হতাশার সৃষ্টি করতে পারে, যা মানসিক সুস্থতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এটি অনেকক্ষেত্রে অলীক কল্পনা বা অবাস্তব আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জড়িত থাকে। এই ধরণের প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশার অনুভূতি জন্ম নিতে পারে। তাই প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি অর্জন সম্ভব।

তিনি জানান, প্রত্যাশা কমিয়ে আনার মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেকে আরও দৃঢ়ভাবে দাঁড় করানো যায়। অন্যের প্রতি অভিযোগ না করে নিজেকে আগে যাচাই করা, সামান্য ভালোবাসাকে গুরুত্ব দেওয়া এবং অল্পতে সন্তুষ্ট থাকার অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে প্রত্যাশা কমানো সম্ভব। এর সঙ্গে ধৈর্য ধরার মতো গুণাবলী চর্চা করা এবং ক্ষমাশীলতার মনোভাব গ্রহণ করা প্রয়োজন।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর ভ্রুমের ‘প্রত্যাশা তত্ত্ব’ অনুযায়ী, প্রত্যাশার তীব্রতা এবং অর্জনের বাস্তবতা এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। তিনি বলেছেন, প্রত্যাশা ও অর্জনের বাস্তবতাকে মিলিয়ে চলার অভ্যাস ব্যক্তিকে মানসিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারে।

অতিরিক্ত প্রত্যাশা কমানোর কিছু কার্যকরী পরামর্শ:

১. নিজের প্রতি মনোযোগ বাড়ান ২. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন ৩. সবসময় সৎ থাকুন ৪. আত্ম-মূল্য ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করুন ৫. সবসময় অন্যের প্রত্যাশা পূরণ করতে না যাওয়া ৬. চাওয়ার সীমা নির্ধারণ করুন ৭. আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন থাকুন ৮. নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন ৯. কৃতজ্ঞতার মনোভাব গড়ে তুলুন ১০. অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সহজভাবে নিন ১১. স্বার্থপর না হওয়া ১২. ক্ষমার অভ্যাস গড়ে তুলুন ১৩. নিয়ম মেনে জীবনযাপন করুন

ডা. তানজিরার মন্তব্য:
তিনি বলেন, “জীবনে কারো কাছ থেকে সবসময় বেশি কিছু আশা করা অবাস্তব হতে পারে। তাই নিজের কাজ নিজে করা এবং নিজের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা উচিত।”

 

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম




হার্টের সুরক্ষায় চিনির পরিমাণ কতটা কম হওয়া উচিত? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বিশেষত, চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য অতিরিক্ত সেবন হার্টের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারতের কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আশিস মিত্র সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমে তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যেখানে তিনি জানান, শরীরের সুস্থতার জন্য দিনে কতটুকু চিনি সেবন করা নিরাপদ এবং তা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ডা. মিত্র বলেন, অতিরিক্ত চিনি খেলে তা ওজন বাড়ায় এবং শরীরে মেদ জমতে থাকে, যা হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রসেসড চিনির অতিরিক্ত সেবন রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়ায়, যার ফলে হার্টের রক্তনালীগুলিতে প্লাক জমতে পারে। এছাড়া ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিনি সেবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ চিনি প্রদাহ বৃদ্ধি করে যা হার্টের রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ায়।

তবে সুস্থ থাকতে চাইলে সাদা চিনির পরিবর্তে ব্রাউন সুগার, মধু বা তালমিছরির মতো বিকল্প বেছে নেওয়া যেতে পারে, যা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর।

ডা. মিত্র পরামর্শ দেন, সুস্থ ব্যক্তিরা দিনে ২ চামচ চিনি গ্রহণ করতে পারেন এবং রান্নায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে চিনি মিশিয়ে খাওয়া নিরাপদ। তবে চিনি সেবনে নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হার্টের সুস্থতা রক্ষায় কিছু পরামর্শ:
১. দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করুন।
২. বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. রেডমিট, ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করুন।
৪. সুগার, ব্লাড প্রেশার এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।




হলুদ ও মধুর উপকারিতা

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: হলুদ এবং মধু, দুটি প্রাকৃতিক উপাদান, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অসংখ্য উপকারিতা প্রদান করে। এই দুই উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়, সেগুলো নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি পাওয়ার হাউস
হলুদ ও মধুর সংমিশ্রণ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে, যা বাতের মতো প্রদাহজনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যারা এসব সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য হলুদ ও মধু খাওয়া বিশেষ উপকারী।

২. ইমিউন সিস্টেম বুস্টার
হলুদ ও মধুর মিশ্রণ একটি শক্তিশালী ইমিউন-বুস্টিং সিস্টেম। হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক, কারণ এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত। এটি ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। অপরদিকে, কাঁচা মধু এনজাইম ও পুষ্টির ভালো উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তাই ঠান্ডা ঋতুতে এই দুই উপাদান একসঙ্গে খেলে সংক্রমণ ও অসুস্থতা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

৩. হজমের সামঞ্জস্য
মধু এবং হলুদ দুর্দান্ত হজমকারী উপাদান। এটি পিত্তের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের চর্বি হজমে সহায়তা করে। মধু একটি হালকা রেচক, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে শান্ত করে এবং পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক, যা পুষ্টি শোষণ এবং পর্যাপ্ত হজমের জন্য অপরিহার্য।

৪. উজ্জ্বল ত্বক সমাধান
হলুদ ও মধুর মিশ্রণ ত্বকের স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। হলুদ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে ভরপুর, যা ব্রণ ও জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে, মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকে পুষ্টি যোগায়। এই দুটি উপাদান সম্মিলিতভাবে মুখের উজ্জ্বলতা এবং স্বাস্থ্যকর টেক্সচার নিশ্চিত করতে পারে।

৫. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
হলুদে উপস্থিত কারকিউমিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি নিউরোইনফ্লেমেশন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকে বাধা দেয়, যা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের প্রতিরোধে সাহায্য করে। মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। তাই এই দুই উপাদান একসঙ্গে খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা সম্ভব।