আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বাধা নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার। তিনি সোমবার (১৮ নভেম্বর) নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন, যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের ওপর সমালোচনার বিষয়টি উঠে আসে।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মিলার বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে সমর্থন করি এবং আশা করি, সরকার এই ধরনের আন্দোলনকে সহিংসভাবে দমন করবে না।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের সব দেশেই আমরা একই কথা বলি—শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন না করা উচিত, বরং তা সমর্থন করা উচিত।”

প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের ‘নূর হোসেন দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশের ঘোষণা ও এতে পুলিশের বাধার বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়াও, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতন, বিতর্কিত সাংবাদিকদের আটক এবং প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়েও আলোচনা করা হয়। সাংবাদিকরা জানতে চান, এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেছে কিনা।

এ প্রসঙ্গে মিলার বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আলাদাভাবে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি এখানে কিছু বলব না। তবে আমরা সরকারের কাছে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সমর্থন করি এবং আশা করি সরকার কোনওভাবেই সেই আন্দোলন দমন করবে না।”

এ সময় সাংবাদিকরা বাংলাদেশ সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলেও মিলার স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম




সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রবর্তিত এই সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বিশেষ করে এই আইনকে কালাকানুন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল বিভিন্ন মহলে। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, আজকের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনি যাচাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

এছাড়া, সাইবারস্পেসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় নতুন একটি আইনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে, যা বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছিল, তবে এটি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে, এই আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করার পরেও কিছু বিতর্কিত ধারা নতুন আইনে রাখা হয়েছিল, যার ফলে সরকারের পক্ষ থেকে অপব্যবহার হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

২০২১ সালে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর এই আইনের বিরোধিতা তীব্র হয়ে ওঠে। আইনের অপব্যবহার বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও, এই আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার কার্যক্রম চলতে থাকে। ২০২৩ সালে এক গণমাধ্যমকর্মীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হলে, আইন বাতিলের দাবি আবারও শীর্ষে উঠে আসে।

পরবর্তীতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন’ রাখা হয়, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সংসদে পাস হয়। এই আইনে পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, এক সপ্তাহের মধ্যে এই আইন বাতিল করা হবে এবং এর অধীনে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোকেও বাতিল করা হবে। এছাড়া, মতপ্রকাশে বাধা সৃষ্টি করা এমন সব আইন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম