পায়রা বন্দরে জাহাজ নির্মাণ প্রকল্প: বাংলাদেশে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের পাশে আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক ও টেকসই জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) এবং অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক জেন্টিয়াম সলিউশন যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এই প্রকল্পে কারিগরি সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্যের সিএমএন নেভাল।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ৭০% মালিকানা থাকবে জেন্টিয়াম সলিউশনের, আর বিএসইসি পাবে বাকি ৩০%। শুরুতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে জেন্টিয়াম সলিউশন দেবে ৩৫ কোটি এবং বিএসইসি দেবে ১৫ কোটি টাকা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা বন্দরের কাছে চর নিশানবাড়িয়া ও মাধুপাড়ায় ১০১ একর খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এই জমি হস্তান্তর করা হয়। এখানে জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন প্রকল্পটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ডাচ প্রতিষ্ঠান ডামেন শিপইয়ার্ড গ্রুপের সহযোগিতায় স্থানীয় শ্রমিকরা আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি শেখার সুযোগ পাবেন। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও জাহাজ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম। চীন, কোরিয়া, ও জাপানের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি কম হলেও দক্ষতা বেশি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বাজার ১ হাজার ৬০০ বিলিয়ন ডলারের। বাংলাদেশের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় এই শিল্পে বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা প্রবল। বাংলাদেশ যদি মাত্র ১% বাজার দখল করতে পারে, তা থেকে আয় হতে পারে ১৬ বিলিয়ন ডলার।
আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা (আইএমও) ২৫ বছরের পুরোনো জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে ৩ হাজারের বেশি জাহাজ অকেজো হয়ে পড়বে। এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ হতে পারে অন্যতম বিকল্প।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, প্রযুক্তিগতভাবেও বাংলাদেশ একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বিশ্বমানের জাহাজ রপ্তানিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম